লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়

লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমার এই আর্টিকেলে বিস্তারিতভাবে লিখেছি।লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় এবং লিভার সিরোসিস রোগী কত দিন বাঁচে সে সম্পর্কেও আমার এই আর্টিকেলে আপনারা জানতে পারবেন। আমি লিভার সিরোসিসের লক্ষণ প্রতিকার সম্পর্কে আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়


লিভার সিরোসিস রোগটি বিভিন্ন দেশেই মানুষের হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকম খাদ্য অভ্যাসের কারণে লিভারে এই সমস্যা দেখা দিতে। তাই আমাদের লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং খাদ্য অভ্যাস দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ভূমিকা

লিভার সুস্থ রাখার জন্য আমাদের খাদ্য তালিকার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা সঠিক নিয়মে খাবারগুলা খাচ্ছি কিনা। লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে তাহলে আমরা লিভার কে সুস্থ রাখতে পারব। লিভার সিরোসিস দুই ধরনের হয়ে থাকে তাই প্রাথমিক অবস্থা জানতে হবে তাহলে আমরা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাধ্যমে লিভার সুস্থ করে তুলতে পারি।

লিভার সিরোসিস রোগী কত দিন বাঁচে

লিভার সিরোসিস এমন একটি রোগ যা ধরা পড়লে মানুষ যে সাথে সাথে মারা যাবে এটি নয় এটি একেবারেই ভুল ধারণা। লিভার সিরোসিস হয়েছে এমনটা জানলে রোগী আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেতে পারে।এটা লিভার সিরোসিস জন্য যে মারা গেছে তা নয়। লিভার সিরোসিস রোগী কত দিন বাঁচবে এটি নির্ভর করে লিভারের কতটুকু ভালো আছে এবং কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর। লিভার সিরোসিস ক্ষতির ওপরে নির্ভর করে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা

  1. কম্পেনসেটেড লিভার সিরোসিস
  2. ডিকম্পেসেটেড লিভার সিরোসিস

কম্পেনসেটেড লিভার সিরোসিস

কম্পেনসেটেড লিভার সিরোসিস কে খুব মারাত্মক ধরনের নয় ।এটি একটি লিভার সিরোসিসের প্রাথমিক অবস্থা। যার কারণে লিভারের কোনরকম সমস্যা আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে প্রকাশ নাও পেতে পারে। এ ধরনের সমস্যার কারণে বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে সহজে ধরা পড়ে না যে রোগীর লিভার সিরোসিস হয়েছে। তাই এ ধরনের রোগী অনেক বছর বেঁচে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কিছু রোগী ৯-১২ বছর বেঁচে থাকে আবার কিছু রোগী ৯-১২ বছর এর কম বেঁচে থাকে। তাই বলা যায় লিভার সিরোসিসের প্রথম দিকে রোগী অনেক বছর বেঁচে থাকে।

ডিকম্পেসেটেড লিভার সিরোসিস

ডিকম্পেসেটেড লিভার সিরোসিস খুব মারাত্মক ধরনের হয়ে থাকে। কোন ব্যক্তির লিভার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তখন এটিকে বলা হয় ডিকম্পেসেটেড লিভার সিরোসিস। লিভার সিরোসিস আক্রান্ত হলে যখন লিভার খুব বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হয়ে যায় তখন রোগীর বিভিন্ন রকম লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ সময় রোগের জন্য খুব খারাপ। কারণ এই আক্রান্ত রোগী বেশি বছর বেঁচে থাকতে পারে না। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কিছু রোগী ২ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে আবার কিছু রোগী ২ বছরের আগেই মারা যায়।

আরো পড়ুন:মেয়েদের ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

তাই বুঝতেই পারছেন আপনারা যে লিভার সিরোসিস হলেই যে মারা যাবে তা নয়। লিভার কতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার ওপর নির্ভর করবে যে রোগী কত বছর বাঁচতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় যদি ধরা পড়ে যে লিভার সিরোসিস হয়েছে তাহলে বিভিন্ন ওষুধের ধারায় এই লিভার সিরোসিসটা ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু যদি বেশি পরিমাণের লিভার সিরোসিস হয়ে থাকে তবে রোগ বেশি বছর বাঁচার সম্ভাবনা কম।

লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায়

লিভার সিরোসিস অসুখটা বেশ মারাত্মক ধরনের। যা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই লিভার যেন ভালো থাকে সেই বিষয়ে জেনে লাইফ স্টাইল সেই ভাবে মেনে চলা উচিত। লিভার একদিনেই নষ্ট হয় না এটি প্রতিদিনের কিছু খাবার এবং জীবনের কিছু নিয়মকানুন রয়েছে যার কারণে লিভার নষ্ট হয়ে সিরোসিসে রূপ নেয়। আসুন আমরা জেনে নি লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে লিভারের সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে সিরোসিসে রূপ নিতে থাকে। অ্যালকোহল অনেক বছর ধরে পান করলে এই সমস্যাটি বেশি দেখা দেয়। অ্যালকোহল পরিহার করা দরকার।
  • জাঙ্ক ফুড অতিরিক্ত তেলেভাজা মসলাদার প্রক্রিয়াজাত খাবার খেলে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়।
  • তাই খাবারগুলো বাদ দিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।
  • লিভার সুস্থ রাখার জন্য কাঁচা পেঁয়াজ রসুন অনেক ভালো সহায়তা করে। তাই খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন এই খাবারগুলো রাখুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমান বেশি পানি পান করুন।
  • দৈনিক খাদ্য তালিকায় শাকসবজি রাখুন।
  • রাস্তাঘাটে সহজেই অল্প দামের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিহার করুন।
  • শরীরে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের মাত্রা থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
  • নিয়মিত শরীর চর্চা ইয়োগা করতে হবে।
  • ফ্যাট জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
  • হেপাটাইটিস প্রতিরোধক টিকা গ্রহণ করতে হবে।

লিভার সিরোসিসের লক্ষণ

লিভার সিরোসিস প্রাথমিক অবস্থায় সাধারণত প্রকাশ পায় না। আবার কখনো অনেক রোগীর ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। লিভার সিরোসিস যখন লিভার খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে এরকম অবস্থায় রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ধরা পড়ে। সিরোসিসের প্রধান কয়েকটি লক্ষণ রয়েছে আসুন আমরা সেই লক্ষণগুলো জেনে নি
  • পা গোড়ালি পায়ের পাতা অনেক সময় ফুলে যায়।
  • চোখ ও মুখ ত্বক হলুদ হয়ে যায়।
  • রোগীর এক্ষেত্রে অনেক সময় বমি বমি ভাব হয়।
  • রোগীর ওজন কমে যায়।
  • ক্ষুধা কমে যায় ও ক্লান্তি বোধ হয়।
  • শরীরে চুলকানি শুরু হয়।
  • মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মাসিক অনিয়মিত শুরু হয় এমনকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • ছেলেদের ক্ষেত্রে অন্ডকোষ ছোট হয়ে যায়।
  • অনেক সময় বিভ্রান্তি শুরু হয় এবং কথা এড়িয়ে আসে।
  • পেটের উপরের দিকে ব্যথা হতে পারে।

লিভার রোগের প্রতিকার

লিভার সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই আমাদের খাবারের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের লিভারের কোন সমস্যা হলে পুরো শরীরে প্রভাব পড়ে। ফলে শারীরিক সুস্থতার জন্য আয়রন, চিনি এবং চর্বি বিপাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ওজন কমে যাওয়া বমি বমি ভাব হওয়া এগুলো প্রাথমিক অবস্থান লিভার রোগের। প্রাথমিক অবস্থায় যদি বিভিন্ন রকম ওষুধ আছে ডাক্তারের পরামর্শে নেয়া যায় তবে লিভারকে সুস্থ রাখা যায়। কিন্তু কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো সাহায্যে লিভার কে সুস্থ রাখতে পারি। আসুন সেই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো জেনে নি।
  • হলুদে রয়েছে অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। যেটি অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট এর মতো কাজ করে লিভারকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • লিভারের জন্য পেঁপে খুবই উপকারী।পেঁপে রসের সাথে লেবুর রস মিশিয়ে চার মাস খেলে লিভার সুস্থ থাকবে।
  • গ্রিন টি এর মধ্যে ক্যাটারচিন রয়েছে যা লিভার কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।সকালে চিনি ছাড়া গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করলে লিভার সুস্থ থাকে।
  • আপেল সিডার ভিনেগার ,মধু ও লেবু সম পরিমাণে নিয়ে পানিতে মিশিয়ে পান করলে শরীরের চর্বি কমতে সাহায্য করে। লিভার থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতেও সাহায্য করে। এটি একমাস নিয়মিত সেবন করার ফলে যকৃত ভালো হয়।
  • আমলকিতে রয়েছে ভিটামিন সি। লিভারের জন্য ভিটামিন সি খুবই উপকারী। আমলকি দিনে চার-পাঁচটা খেলে লিভার ভালো থাকে।

লিভার সিরোসিস রোগীর খাবার

সুস্থভাবে আছে বাঁচতে অবশ্যই লিভার কে সুস্থ রাখতে হবে। এজন্য আমাদের খাদ্য অভ্যাসের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।লিভারে ফ্যাট জমলে অনেক সময় বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাছাড়া থাইরয়েড, কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস নানা ধরনের রোগ থেকে সৃষ্টি হতে পারে ফ্যাটি লিভার। সঠিক সময়ে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা করতে হবে।এবং আমাদের খাদ্য অভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনতে হবে। 

আরো পড়ুন:তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন

ফ্যাটি লিভার সময়মত চিকিৎসা করানো উচিত না হলে লিভার সিরোসিস দেখা দিতে পারে। খাবারের কারণে ফ্যাটি লিভার ফ্যাট জমা হতে হতে সেটা অনেক বড় আকার ধারণ করতে পারে। রোজগার খাদ্য অভ্যাসে অবশ্যই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে শরীরে চর্বি বেশি না জমে সেরকম খাবার রাখা। তাই সবার উচিত ফ্যাটি লিভার রে আক্রান্ত ব্যক্তির রোজ খাদ্য তালিকা যেগুলো খাবার রাখবেন সেগুলো সঠিকভাবে জেনে রাখবেন।
  • রসুন আমাদের শরীলের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। তাই খাদ্য তে অবশ্যই আমাদের রসুন রাখা উচিত।
  • পাতি লেবু ফ্যাটি লিভার কমাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। ফলে লিভার কে ক্ষতি হতে দেয় না।
  • গ্রিন টি ওজন কমাতে সাহায্য করে তার সাথে শরীরের চর্বি শোষণের সাহায্য করে।
  • টুনা ও সলমন এর মতো মাছে থাকা ও মেগা ৩ লিভার সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • অ্যাভোকাড্রো খুবই ভালো এটি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। উচ্চ ফাইবার থাকায় এটি ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে তার সাথে ওজনও কমতে সাহায্য করে।
  • সয়া প্রোটিন যা চর্বি জমানোর পরিবর্তে অপসারণ করতে সাহায্য করে। লিভারকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
তাছাড়াও আরো অনেক রকম খাবার রয়েছে যেগুলো আপনারা একটি নিয়মের মধ্যে রেখে খেতে পারেন।যেগুলো আমাদের লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে ।
  • বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছ
  • সবজি বা ফলের সালাদ
  • বাদাম
  • রুটি
  • আশঁযুক্ত ফলমূল
  • চর্বি ছাড়া মাংস তবে এক পিস থেকে দুই পিস
  • বিভিন্ন রকম আচার বিশেষ করে রসুনের আচার
  • ফলের জুস
  • ডাবের পানি
  • টক দই
  • গ্লুকোজেন পানি

লেখক এর মন্তব্য

আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা বুঝতে পেরেছেন লিভার সিরোসিস সম্পর্কে। আমি আমার এই আর্টিকেলে আপনাদেরকে লিভার সিরোসিস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। আপনারা যেন লিভার সিরোসের সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারেন। লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় গুলো জেনে আমরা আমাদের লিভার কে সুস্থ রাখার জন্য নিয়ম অনুযায়ী খাবার খেতে পারি এবং ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে পারি।

আরো পড়ুন:ওজন কমাতে গ্রিন টি বানানোর নিয়ম

লিভার সিরোসিস থেকে মুক্তির উপায় ও লিভার সিরোসিসের লক্ষণ সঠিকভাবে জানার জন্য আমার এই আর্টিকেলটি না টেনে সম্পূর্ণটা মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য অবশ্যই আমাদের প্রথমে চেষ্টা করতে হবে যেন লিভার কোনভাবে নষ্ট না হয়। কারণ প্রাথমিক অবস্থাতে আমরা বুঝতে পারি না অনেক সময় যে লিভারের সমস্যা হয়েছে। ফ্যাটি লিভার থেকেই লিভার সিরোসিস হয় তাই আমাদের ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে হবে।

আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারাও উপকৃত হয়েছেন। আমার এই আর্টিকেলটি আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই আপনারা আপনাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এর সাথে শেয়ার করতে পারেন। আমার ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ভিন্ন ভিন্ন আরো আর্টিকেল পড়ার জন্য। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;

comment url