করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা

আমার এই আর্টিকেলে আমি করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এবং উচ্ছে বা করলার পার্থক্য কি এবং করলার জুসের অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাই আপনারা আর্টিকেলটি না টেনে সম্পূর্ণটি মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা

অনেকেই করলা তিতা হয় খেতে চাই না। কিন্তু করলার অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। করলা পুষ্টিগণের ভরপুর একটি সবজি। তাই অবশ্যই করলার খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী খেতে হবে। এবং করলার জুস কিভাবে খেলে কোন সমস্যা হবে না খেতে পারবেন সে সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

ভূমিকা

উচ্ছে বা করলা সারা বছরই এই সবজি বাজারে পাওয়া যায়। তবে গরম ও বর্ষাকালের সবজি হিসেবে এ সময় দামটা কম থাকে। করলা অনেকেই পছন্দ করেন না ।কারণ এ সবজিটি অনেক তিতা। এই তিতা ভাবটা কমিয়ে আপনারা খেতে পারেন। করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পড়ে আপনারা খেতে পারেন। কারণ করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। যদি কোন জিনিসের উপকারিতা থাকে তবে তার উপকারিতা থাকে। বিভিন্ন রকম ভাবে করলার জুস বানানো যায় ।আর্টিকেল পড়লে আপনারা কয়েক ধরনের করলার জুসের বাড়ানোর নিয়ম পাবেন। আপনারা সেই নিয়ম অনুযায়ী বানিয়েও খেতে পারেন।

করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা

করলা অনেকেই খেতে চায় না কারণ অনেক তিতা। কিন্তু করলার জুস খেতে তিতা লাগলেও এর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।শারীরিক দিক দিয়ে করলার জুস খাওয়া অনেক উপকারী। আসুন আমরা করলা জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন।

করলার জুসের উপকারিতা

করলার জুসের উপকারিতা বহু গুণে গুণান্বিত।
  • করলার জুস খেলে শরীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে।
  • হজম শক্তিতে সহায়তা করে।
  • যারা ওজন কমাতে চান তারা করলার জুস খেতে পারেন এতে আপনার ওজন কমাতে সহায়তা করবে।
  • করলার জুস খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি করলার জুস খায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।
  • যাদের অ্যালার্জি আছে তারা নিয়ম মত করলার জুস খেতে পারেন। এতে অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে।
  • ত্বক ও চুলের জন্য করলার জুস অনেক উপকারী। ত্বক উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া রোধ করতে সহায়তা করে।
  • করলার জুস খেলে ক্যান্সার রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া যায়।
  • খারাপ কলেস্টরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
  • করলার জুস কে কৃমিনাশক হিসেবেও বলা হয়ে থাকে। কারণ তিতার কারণে কৃমি অতিক্রম থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • সর্দি কাশি জ্বর থেকেও সহায়তা পাওয়া যায় করলার জুস খেলে।

করলার জুসের অপকারিতা

প্রতিটা খাবারেরই অতিরিক্ত হলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। করলার জুসের বেলাতেও এ নিয়মের ব্যতিক্রম নাই। অতিরিক্ত তিতা খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরের অনেক রকম সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা আসুন অপকারী দিকটা জেনে নি।
  • করলার জুস অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে যেতে পারে। কারণ ডায়াবেটিসের ওষুধের পাশাপাশি যদি এই জুস খাওয়া যায় তাহলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • শিশুরা অতিমাত্রায় জুস খেলে পেট ফাঁপা বমি বমি ভাব ও পেটে ব্যথা বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায় মহিলারা অনেক সময় তিতার খেতে চাই। তখন অতিমাত্রায় খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
  • অতিরিক্ত করলার জুস খেলে অনিয়মিত হার্টবিট হতে পারে।

করলার জুস বানানোর নিয়ম

করলার জুস খেলে শরীরের রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে আপনি যদি করলার জুস খান তাহলে আপনার শারীরিক অনেক সমস্যা দূর হবে ডায়াবেটিসের রোগীও যদি না হন তাতেও খেতে পারেন। কারণ করলার জুস পান করলে আপনার শরীরের শর্করা মাত্রা কে বৃদ্ধি হতে দেয় না নিয়ন্ত্রণে রাখে। আপনার ত্বকের বার্ধক্যের ঝুঁকি কমাতে করলার জুস অনেক কার্যকরী।করলার জুস বিভিন্ন রকম করে বানানো যায়।

আরো পড়ুন:বারোমাসি আমের জাত সমূহ জানুন

১ নম্বর পদ্ধতি:উপকরণ করলা, শশা, পরিমাণ মতো লেবুর রস, পরিমাণ মত হলুদ গুঁড়া,
প্রস্তুত প্রণালী
প্রথমে করলা ও শশা কে টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে। টুকরো করা করোলা গুলোকেঠান্ডা পানিতে লবণ দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এতে কিছুটা হলেও তিতা ভাব চলে যাবে। তারপরে ভালো করে করলার টুকরোগুলোকে ধুয়ে এবং শসার টুকরো গুলো ধুয়ে একসাথে ব্লেন্ড করুন। তারপর ব্লেন্ড করা জুসটাকে ছেকে নিন। এতে পরিমাণ মতো লেবুর রস ও এক চিমটি হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন।
২নম্বর পদ্ধতি:উপকরণ করলা ও মধু।
প্রস্তুত প্রণালী 
প্রথমে করলা গুলোকে কেটে টুকরো করে লবণ ও ঠান্ডা পানির মধ্যে ডুবে রাখুন। অবশ্যই করলার বিচিগুলোকে ফেলে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে করলাগুলোকে ভালো করে ধুয়ে ব্লেন্ড করুন। ব্লেন্ড করা জুসগুলো ছেঁকে নিন। এতে আপনাদের অনেক সময় তিতা লাগতে পারে বেশি। তাই এর সাথে মধু যোগ করে নিতে পারেন। পরিশেষে এইজুস পান করুন।
৩ নম্বর পদ্ধতি: উপকরণ একটা করলা, এক চামচ লেবুর রস, পরিমাণ মতো পিঙ্ক লবণ,
প্রস্তুত প্রণালী
করোলা কে টুকরো টুকরো করে কেটে বিচি ফেলে দিয়ে লবণ ও ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। টুকরোগুলো ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেকে নিন। এরপর ছেকে নেয়া জুসগুলোতে পরিমাণ মতো পিঙ্ক লবণ ও পরিমান মত লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে পরিবেশন করুন ।

করলার জুস খাওয়ার নিয়ম

করলার জুস অনেক তিতা তাই অনেক সময় আপনার বমি বমি ভাব হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনারা অল্প একটু পরিমাণ চুমুক দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন। একেবারেই বেশি খাওয়া যাবে না তাহলে বমি হয়ে যেতে পারে বা শরীর খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই প্রথমদিকে অল্প পরিমাণ খেয়েই অভ্যাস করুন। 

আরো পড়ুন:ডিটক্স ওয়াটার বানানোর নিয়ম জানুন

করলার জুস সকালে খালি পেটে খাওয়া অনেক উপকারী। এতে আপনার শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। সকালে খালি পেটে খেলে পেট পরিষ্কার থাকে এবং হজম শক্তিতে সহায়তা করে। আবার নিয়ম মত আপনারা রাতে একবার খেতে পারেন। তবে সবচেয়ে ভালো হয় সকালে খালি পেটে করলার জুস খাওয়া।

উচ্ছে ও করলার পার্থক্য

করলা ও উচ্ছের মধ্যে পার্থক্য হল এদের আকারের দিক দিয়ে। কিন্তু সাধের দিক দিয়ে মূলত প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। আবার একটু তিতা বেশি কোনটাতে একটু তিতা কম হয়ে থাকে। দুইটারই ক্রোমোজোম সংখ্যা সমান হয়ে থাকে যেমন (2n =22)।উচ্ছে আকারে ছোট হয় এবং করলা আকারে বড় ধরনের হয়ে থাকে।
করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা

৫-৭ cm লম্বা গুলোকে উচ্ছে বলা হয় এবং তার চেয়ে যেগুলো বড় হয়ে থাকে সেগুলা কে করোলা বলা হয়।। আবার উচ্ছের খাদ্যমান সবচেয়ে বেশি। দুটোর মধ্যে momordicasoids নামক একটি উপাদান রয়েছে যার উপরে নির্ভর করে তিতা ভাব।momordicasoids উপাদানটি যার মধ্যে বেশি থাকে তার তিতা ভাবটা বেশি হয়।

আবার যেগুলো একটু সাদাটে ধরণের হয় সেগুলোতে তিতা কম হয় বেশি সবুজ গুলো বেশি তিতা হয়ে থাকে। এই সবজি তিতা হলেও পুষ্টিগুণে ভরা। তবে এই সবজি বেশি খাওয়া উচিত নয় খুব জোর দিনে 40 গ্রাম খাওয়া যেতে পারে।

উচ্ছে পাতার বৈশিষ্ট্য

উচ্ছে করলার মত হলেও একটু ছোট এবং তিতা ধরনের হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই তিতা খেতে পছন্দ করি না। কিন্তু শরীরের উপকারের জন্য আমাদের কখনো কখনো উচ্ছে খাওয়া অনেক ভালো। কারণ উচ্ছেতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। উচ্ছে বা করলা দুটোতেই অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।যেমন ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, ফাইবার, বিটাক্যারোটিন, ফলেট, আয়রন, ভিটামিন সি এবং এন্টিভাইরাল পুষ্টি উপাদান রয়েছে।

আরো পড়ুন:বিটরুট পাউডার এর দাম কত

উচ্ছে বা করলা শরীরের জন্য খুবই উপকারী একে সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। এই ভিটামিনের কারণে এই সবজিটি খেলে আমাদের শরীরে অনেক উপকারে আসে। এ আর্টিকেলে আমি করলার জুস-এ কি উপকারিতা রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। উচ্ছে বা করলায় কি কি ভিটামিন রয়েছে সে সম্পর্কেও আমি এখানে বিস্তারিত আলোচনা করব। আসুন আমরা জেনে নিই উচ্ছে বা করলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
  • সুগার কমাতে উচ্ছে বা করলাতে রয়েছে প্রাকৃতিক ইনসুলিন। ফলে এটি সুগার এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • রক্ত বিশুদ্ধি করনে উচ্ছে বা করলা অনেক উপকারে আসে। অনেকের বিভিন্ন কারণে রক্ত দূষিত হতে পারে। উচ্ছে বা করলা খেলে এ দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • ম্যালেরিয়া রোগ সারাতে উচ্ছে বা করলা খুবই ভালো একটি সবজি হিসেবে পরিচিত। কারণ ম্যালেরিয়া রোগের জন্য উচ্ছে বা করলার পাতার জুস খেলে ম্যালেরিয়া রোগ দ্রুত সেরে যায়। ম্যালেরিয়া রোগী দিনে যদি একবার করে সাতদিন খায় এই জুস তাহলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। করলার পাতা তিনটা ও তিনটি গোল মরিচ থেপা করে জুস বানিয়ে নিতে হবে তাহলে এই জুস খেলে সুস্থ হয়ে যাওয়া যায়।
  • অনেক সময় জ্বর হলে মুখে রুচি থাকে না। করার পাতার জুস খেলে মুখের রুচি ফিরে আসে।

লেখকের শেষ কথা

করলা বাজারে সারা বছরই পাওয়া যায়। করলা বিভিন্ন রকম করে খাওয়া যায়। করলা ভাজি ভর্তা চচ্চড়ি করলার মাছ দিয়ে ঝোল এমন কি করলার জুসও খাওয়া যায়। যেভাবেই রান্না করে খাওয়া হোক না কেন করলার অনেক উপকারিতা গুণ রয়েছে। যার কারণে আমাদের করলা খাওয়া দরকার। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় না খেয়ে নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া দরকার।

আরো পড়ুন:ঘরে বসে প্যাসিভ ইনকাম করুন ৭টি উপায়ে

করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে আপনাদের করলা জুস খাওয়া দরকার। কারণ করলার জুসে যেমন উপকারিতাও রয়েছে তেমন অপকারিতাও রয়েছে।নিশ্চয়ই আমার এই আর্টিকেল থেকে আপনারা করলার জুসের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। তবে অবশ্যই আপনাদের বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মস্বজন ও অন্যান্য সাথে শেয়ার করবেন। আমার এই ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;

comment url