কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম জানতে চান? ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কেও জানতে চান তবে আমার এই আর্টিকেলটি আপনারা প্রথম থেকে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। তাহলে আপনারা জানতে পারবেন কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম। ছোট বড় সব ধরনের বয়সেরই মানুষের কাশি থেকে নিরুপায় দিতে পারে এ তুলসী পাতা।
কাশি হলে অনেকেই ডাক্তারি ওষুধ ছাড়া কিছুই বোঝেনা । কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম ঠিক ভালো করে যদি জানেন তবে সে নিয়মে খেলে কাশি দ্রুত সেরে যাবে। শুধু যে কাশি জন্য তুলসী পাতার খাওয়ার নিয়ম জানলেই হবে না আরো অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সারানোর যায়। আরো অনেক উপকারে তুলসী পাতা ব্যবহার করা হয়।
ভূমিকা
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম মেনে খেলে ছোট বড় সকলেরই কাশি ভালো হওয়ায়।তবে তুলসী পাতা অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয়। তুলসী পাতা সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চুলের যত্নেও তুলসী পাতা ব্যবহার করা যায়। তবে সবচেয়ে যেটা ভালো ব্যবহার করা যায় তা হচ্ছে কাশির জন্য। তাই কাশির কথাটাই বেশি আসে ছোট বাচ্চাদের জন্য অনেক উপকারে আসে। কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম মেনে এই জন্য ছোট বাচ্চাদেরকে খাওয়াতে হয়। যাতে তাদের কাশি সর্দি জ্বর অতি তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যায়।
আরো পড়ুন:আপেল সিডার ভিনেগার উইথ মাদার খাওয়ার নিয়ম
খালি পেটে তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা
তুলসী পাতার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি।তুলসী পাতার রসে অনেক উপকার রয়েছে।তুলসী পাতা রস করে খেলেও উপকারে আসে আবার চিবিয়ে খেলেও উপকারে আসে। তুলসী পাতার রস ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং পেটের সমস্যাও দূর করে। খালি পেটে তুলসী পাতা হওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে চলুন আমরা খালি পেটে তুলসী খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নি।
- সর্দি কাশি দূর করতে তুলসী পাতার উপকারিতা অনেক। আপনার বুকে কফ জমে থাকলে তুলসী পাতা রস করে মধু দিয়ে খেলে কাশি দূর হয়। তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন যা ওষুধের চেয়েও ভালো কাজ করে।
- মুখে দুর্গন্ধ দূর করতে সহায়তা করে। চিকিৎসকের মতে মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর হয় তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে তুলসী পাতা খেতে পারেন। এমনকি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক যৌগ রয়েছে যা শরীরের সুস্থ করতে সহায়তা করে।
- রোজ সকালে উঠে যদি তুলসী পাতা চিবিয়ে খাওয়া হয় তাতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কম হবে।
- হজমের সমস্যা দূর করতে তুলসী পাতা ভালো সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অনেক ভাজাপোড়া তেল মশলা খেলে হজমের সমস্যা হয়। তুলসী পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে হজম মেয়ের সমস্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- ক্যান্সারের রোগ দূর করতে বা কমাতে তুলসী পাতা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তুলসী পাতা খেলে ক্যান্সারের রোগের ঝুঁকি কম হয়।
- তুলসী রস পান করলে ডায়াবেটিসের রোগীর ক্ষেত্রে অনেক ভালো। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
তুলসী পাতার ব্যবহার
তুলসী ভেষক একটি গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে Ocimum Sanctum।হিন্দু সম্প্রদায়ের এই গাছটি পবিত্র গাছ নামে অভিহিত। তুলসীর পাতা সর্দি, কাশি,বায়ুনাশক, কৃমি, অ্যান্টিসেপটিক ও হজম ভালো হয় এসব কিছুতেই ব্যবহার করা যায়।তুলসী পাতার অনেক ব্যবহার রয়েছে।
- কুষ্ঠ রোগ হলে তুলসী পাতার রস খেলে ভালো হয়। এছাড়াও তুলসী পাতার রস আঙ্গুল ক্ষয়ে ও হারে আক্রমণ করে এতেও রোগ মুক্তি করে।
- যদি আপনাদের কারো দাঁতের ব্যথা সমস্যা থাকে তবে তুলসীর রস গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে দাঁতের যন্ত্রণার জায়গায় ধরলে যন্ত্রণা কম হবে।
- জন্ডিস হলে তুলসী পাতার রস খেলে রোগ সেরে যায়। পাঁচ গ্রাম তুলসী পাতা পাঁচ গ্রাম পানি দিয়ে বেঁটে খেলে জন্ডিস রোগ ভালো হয়।
- ঠান্ডা গরমে চোখ ওঠা রোগটি সংক্রামক রোগ। এই রোগ হলে আশেপাশে সকলের রোগ দেখা দেয়।তুলসী পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে কাজলের মতো চোখে দিলে চোখের পানি পড়া ও চোখ উঠা দূর হয়।
কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
শিশু থেকে প্রায় সব বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই কাশির হলে তুলসী পাতার রস খেলে ভালো হয়। তুলসী পাতা একটি ঔষধি গাছ। মধুর সাথে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে কাশি ভালো হয়। সকালবেলা খালি পেটে তুলসী পাতার রস আদা চা ফুটিয়ে খেলে অনেক আরাম পাওয়া যায়। সব ধরনের কাশির ক্ষেত্রেই যে তুলসী পাতা কাজ করবে তা নয়।
অল্প কাশিতে যদি আপনি তুলসী পাতা নিয়মানুযায়ী খান তাহলে ঠিক অনুযায়ী কাজ করবে। তুলসী পাতা খেলে যে শুধু কাশি দূর হয় তা নয় এতে মুখের রুচি বাড়ে হজম শক্তিতে সহায়তা করে।তুলসী পাতার রস কিভাবে খাবেন তা জানুন।একটি বা দুটি তুলসী পাতা, ২ টেবিল চামচ মধু, সামনে একটু হলুদ গুঁড়া সামান্য একটু লং পেপার আধা চিমটি কালো গোলমরিচ সবকিছু একসাথে মিশিয়ে নিলে সেখান থেকে একটু রস বের হবে।
আরো পড়ুন:দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত
এ রসটি পাঁচ মিলি করে দিনে ২-৩ বার খেতে হবে। এই উপাদানগুলো অত্যন্ত গরম প্রকৃতির তাই দুই সপ্তাহ খাওয়ার পরে বন্ধ করে দিতে হবে। তুলসী পাতার রস খাওয়ার ৫ থেকে ১০ মিনিট পর হালকা গরম পানি খাওয়া উচিত। চার ধরনের তুলসী পাতা পাওয়া যায়।এই চার ধরনের তুলসী পাতা নাম হচ্ছে বাবুই তুলসী, রাম তুলসী, কৃষ্ণ তুলসী ও শ্বেত তুলসী সব তুলসী পাতাগুলোই উপকারী তবে কৃষ্ণ তুলসী পাতা হলে ভালো হয়।
শিশুদের তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম
ঋতু পরিবর্তনে শিশুদের সর্দি কাশি জ্বর গলা ব্যথা, এতে সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় তুলসী পাতার রস অনেক উপকার আসে। শীতের সময় শিশুকে নিয়মিত তুলসী পাতার রস খাওয়ালে সর্দি কাশি দূর করতে সহায়তা হয়। তুলসী পাতার রস কয়েক রকম ভাবেই শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। সে নিয়মগুলো আপনারা জানুন।
- শিলপাটাই আদা পিষে নিয়ে তুলসী পাতার রসের সাথে মিশিয়ে শিশুকে দিনে দুইবার খাওয়ান।
- আদা কুচি তুলসী পাতা ও দারুচিনি গুড়া মিক্সড করে একটি গরম পানিতে নিয়ে এক ধরনের পানীয় তৈরি হবে। এই পানীয়টি পান করলে শিশু সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাবে।
- তুলসী পাতা রসের সাথে মধু মিশিয়ে হালকা গরম করে খাওয়ালে অনেক উপকার আসে।
- তুলসী পাতার সাথে গুড় মিশিয়ে চিবিয়ে খাওয়াতে পারেন।
- নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত শিশুকে তুলসী পাতা খাওয়ালে সর্দি কাশি গলা ব্যথা ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাবে।
তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে কি হয়
নিউট্রিসিয়ানদের মতে তুলসী পাতা রস হিসেবে খাওয়াই ভালো। তুলসী পাতা যদি চিবিয়ে খাওয়া হয় তাতে তুলসী পাতার যে পারদ ও আয়রনের মাত্রা বেশি সেটি নির্গত হতে থাকে এবং তাতে দাঁতের ক্ষয় রোধ করে। তাই তুলসী চিবিয়ে খেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়। তাই তুলসী পাতা চায়ের সাথে খাওয়ায় উত্তম। চায়ের সাথে তুলসী পাতা খেলে জীবাণু সংক্রমণ রাখতে ও ত্বকের ইনফেকশন দূর করতে সহায়তা করে। রক্ত। তুলসী পাতার চা করার জন্য চায়ের মধ্যে তুলসী পাতা ফুটতে দেন। ফুটে গেলে আজ কমে কিছুক্ষণ রেখে দেন তার মধ্যে এক চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে খান তাতে ভালো উপকার দিবে।
তুলসী পাতার ক্ষতিকর দিক
অতিরিক্ত তুলসী পাতা খেলে এটি ক্ষতি কর হতে পারে। অতিরিক্ত তুলসী পাতা না খেয়ে পরিমাণমতো খাওয়া উচিত।
- নারীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে বন্ধ্যাত্বের কারণে হয়ে দাঁড়ায়।
- অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।
- যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা যদি খাওয়ার আগে তুলসী পাতা তবে রোগীর ডায়াবেটিস নীল হয়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত তুলসী পাতা খাওয়ার কারণে মূত্র কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
- তুলসী পাতার আয়রন অতিরিক্ত থাকায় এর মিনারেল গুলো নির্গত হয়ে দাঁতের ক্ষয় করতে পারে।
ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার
ত্বকের যত্নে তুলসী পাতার ব্যবহার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তুলসী অনেক গুণে গুণান্বিত। তাই সৌন্দর্যের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নয়।
- ব্রণ যদি ফুলে পেতে লাল হয়ে ওঠে তবে সেখানে তুলসী পাতা বেটে নিম পাতা বেটে একটু গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট করে কিছুক্ষণ রেখে দেন ব্রণের উপরে খুব তাড়াতাড়ি সেরে যাবে।
- ব্রণের দাগ থাকলে মুখ দেখতে অনেকটা খারাপ লাগে। ব্রণের দাগ দূর করতে তুলসী পাতা বেটে তার সাথে একটু বেসন মিক্সড করে পেস্ট করে পুরো মুখে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে দিন তাতে ব্রণের দাগ চলে যাবে।
- মুখে অনেক সময় ছোপ ছোপ কালো দাগ দেখা দেয়। এ দেখ ছাড়িয়ে তুলতে অনেক সময় লেগে যায়। তুলসী পাতা বেটে তার সাথে ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর ঘষে ঘষে ভালো করে মুখটা ধুয়ে ফেলুন এই প্যাকটি এত ভালো যে শুধু মুখের ছোপ ছোপ কালো দাগ দূর করবে তা নয় এটি মুখের পোরস ছোট করতে সাহায্য করে।
- আপার লিপ এর পরে অনেকের স্কিন জ্বালাপোড়া করে তুলসী পাতা বেটে মুখে লাগিয়ে রাখলে জ্বালাপোড়া কমে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে তুলসী পাতা ১০টি নিয়ে তার সাথে আধা চা চামচ গুঁড়ো দুধ নিয়ে পেস্ট করতে হবে। এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখতে হবে 20 মিনিট। 20 মিনিট পরে মুখ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন লাগাতে পারেন। অনেক ভালো কাজ করে।
- শীতে টক নিয়ে অনেকের সমস্যা ত্বক উস্কো দেখায়।১০-১২ টি তুলসী পাতা বেটে নিয়ে এর সাথে টক দই মিশিয়ে পেস্ট করে সমস্ত মুখে ১৫ মিনিট রেখে দিলে। ১৫ মিনিট পর নরমাল পানিতে ধুয়ে ফেললে দেখা যাবে ত্বকের শুষ্ক ভাব অনেকটাই চলে গেছেঅ
- চুলের যত্নেও তুলসী পাতা ব্যবহার করা যায় ।তুলসী পাতার সাথে শুকনো আমলকি গুড়া সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে সেই পানি দিয়ে চুল ধুলে চুল পেকে যাওয়া কমে যায়। এবং তুলসী পাতার রস তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে দিলে খুশকির সমস্যা দূর হয়।
লেখক এর মন্তব্য
বর্তমান যুগে মানুষ সব সময় ওষুধের উপর নির্ভরশীল।তবে ওষুধ ছাড়াও কিছু ঔষধি গাছ রয়েছে যেগুলো নিয়ম অনুযায়ী খেলে রোগ সারে। তুলসির পাতা অনেক গুনে গুনানিত। তুলসী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। যা সকল বয়সী মানুষদের জন্য উপকারী। কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম মেনে সঠিকভাবে খেলে কাশি ভালো হয়।
আরো পড়ুন:খালি পেটে মধু খাওয়ার উপকারিতা
উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আপনারা তুলসী সম্পর্কে সঠিক ধারণা জানতে পেরেছেন। এবং আমি আশা করি আমার এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এরকম আরো আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত আমার ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন এবং আপনার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;
comment url