থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানতে চান? থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয় সেটা কি আপনারা জানেন? তাহলে আমার এই আর্টিকেলটি আপনারা পড়তে পারেন। আমার এই আর্টিকেলে আমি থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে লিখেছি।
থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

অরো পড়ুন:কাশির জন্য তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম

আপনারা অনেকেই থানকুনি পাতা সম্পর্কে জানেন না। যারা শহরে বাস করে তারা থানকুনি পাতা হয়তো দেখেননি বাসের সম্পর্কে জানেন না। আগে থানকুনি পাতা অনেক জায়গাতেই দেখা যেত। কিন্তু এখন চারিদিকের গাছপালা কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার কারণে এখন থানকুনি পাতা শহরের দিকে আর দেখা যায় না। তবে গ্রামাঞ্চলে থানকুনি পাতা এখনো পাওয়া যায়। থানকুনি পাতার অনেক উপকারী ও অপকারিতা আছে যেগুলো জেনে আমরা ব্যবহার করতে পারি।

ভূমিকা

বর্তমানে আমরা অসুস্থ হলে সারিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন রকম ঔষধ ব্যবহার করে থাকে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। কিছু উদ্ভিদ রয়েছে যেগুলো ঔষধি গুনে গুণান্বিত। তার মধ্যে থানকুনি একরকম উদ্ভিদ যা ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে কাজ করে। আমার এই পোস্টে আপনারা খুব সহজেই পড়ে জানতে পারবেন থানকুনি পাতা কিভাবে ব্যবহার করতে হয়। এবং এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। থানকুনির পাতায় রস ত্বক ও চুলের অনেক উপকার আসে।

থানকুনি পাতা কিভাবে খেতে হয়

থানকুনি পাতা দেখতে গোলাকার পাতার ধারে কিছুটা খাস খাস রয়েছে। এটি বাংলাদেশের সর্বত্রই পাওয়া যায় তবে গ্রামাঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়। এটি লবণাক্ত টাইপের আবহাওয়া বেশি জন্মায়। থানকুনি পাতা এটা একটি ঔষধি গাছ। গ্রামাঞ্চলে এ গাছটি বেশি দেখা যায়। থানকুনি পাতার রস গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার আসে। 

থানকুনি পাতা খাওয়ার বিভিন্ন রকম নিয়ম রয়েছে। থানকুনি পাতার খেলে অনেক রকম রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ওষুধ হিসেবে থানকুনি পাতা খাওয়া যায় যেই নিয়মে সে নিয়ম গুলো আসুন জেনে নিন। এবং তার সাথে আপনাদেরকে জানাবো থানকুনি পাতা বিভিন্ন রকম পদ্ধতিতে মুখরোচক স্বাদ করে ভাতের সাথেও খাওয়া যায়।
যাদের গ্যাস্ট্রিক আছে তারা থানকুনির পাতা রস কাঁচা দুধের সাথে মিক্স করে খেলে গ্যাস্ট্রিক দূর করে। রক্ত দূষণ দূর করার জন্য থানকুনি পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে রক্ত দূষণ দূর হয়।

থানকুনি পাতার ভর্তা

উপকরণ:
থানকুনির পাতার ভর্তা খেতে অনেক ভালো লাগে। থানকুনি পাতা লাগবে ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি পরিমান মত, পরিমাণ মতো রসুন কুচি, পরিমাণ মতো কাঁচা মরিচ আপনারা যে রকম ঝাল খেতে পছন্দ করেন সেই রকম মরিচ দিবেন, লবণ পরিমাণ মতো, সরিষার তেল পরিমাণ মতো ও১-২ টি আলু সিদ্ধ।
প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে থানকুনি পাতাগুলো ধুয়ে কেটে নিন। আলু গলিয়ে ভর্তা করতে নিতে হবে। রসুন কুচি ,পেঁয়াজ কুচি, আদা কুচি, লবণ ও সরিষার তেল একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে তার সাথে কাঁচা মরিচ মিশিয়ে নিতে হবে এবার আলু সিদ্ধ কে ভালো করে একসাথে মিশিয়ে চটকাতে হবে। তার সাথে থানকুনি পাতাগুলো দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে থানকুনি পাতার ভর্তা হয়ে যাবে। এই ভর্তা গরম ভাতের সাথে খেতে অনেক সুস্বাদু। এবং অনেক রোগ নিরাময় হয়।

থানকুনি পাতার ভাজি

উপকরণ
থানকুনি পাতা ১০০ গ্রাম, পরিমাণ মতো পেঁয়াজকুচি, পরিমাণ মতো মরিচ, পরিমাণ মতো তেল ও পরিমাণমতো লবণ এগুলো থানকুনি পাতা ভাজি করার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। আপনারা যদি এই ভাজির স্বাদ আরো বাড়াতে চান তবে এর সাথে আলু ও চিংড়ি মাছ যোগ করতে পারেন।
প্রস্তুত প্রণালী
থানকুনি পাতা ভালোভাবে ধুয়ে কুচি করে কেটে নিতে হবে। আপনারা যদি আলু বা চিংড়ি মাছ দিতে চান সেক্ষেত্রে আলু কুচি করে কেটে নিতে হবে এবং চিংড়ি মাছ গুলো ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে। প্রথমে করায়ে তেল দিতে হবে পিয়াজ এবং রসুন করছি কাঁচামরিচ দিয়ে ভালো করে নাড়তে হবে। কিছুক্ষণ পর থানকুনি পাতা কুচি ও লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন। তার সাথে আলু ও চিংড়ি মাছও দিয়ে দিবেন। কিছুক্ষণ পর পর ঢাকনা খুলে নেড়ে দিতে হবে। আলু সিদ্ধ হয়ে আসলেই ৫-৬ মিনিট পরে নামিয়ে ফেলুন। হয়ে গেল মজাদার থানকুনি পাতা ভাজি। যেটা অনেক সুস্বাদু খাবার আপনারা অনেকেই এই খাবারটি খাননি। আপনারা থানকুনি পাতার ভাজি করে খেতে দেখতে পারেন।

থানকুনি পাতার জুস

উপকরণ
থানকুনি পাতা ১০০ গ্রাম এবং পরিমাণ মত মধু।
প্রস্তুত প্রণালী
থানকুনি পাতার জুস বানানো অনেক সহজ। থানকুনি পাতা গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে এবং তা কুচি করে যাদের ব্লেন্ডার নেয় তারা পাঠায় পিসতে পারেন এবং যাদের ব্লেন্ডার আছে ব্লেন্ডার করে নিতে পারেন। তারপর সেই ব্লেন্ডার করে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এরপর রস বের হবে সেই রসটার সাথে মধু মিশিয়ে দিলেই থানকুনি পাতার জুস তৈরি হয়ে যাবে। অনেকেই এই জুসটা ওষুধের হিসাবে পান করে থাকে। কারণ সুস্থ থাকতে অনেক সময় থানকুনি পাতার জুস অনেক উপকারে আসে।

থানকুনি পাতার বড়া

উপকরণ
থানকুনি পাতা ১০০ গ্রাম, পরিমাণমতো পিয়াজ, পরিমান মত কাঁচা মরিচ, পরিমাণ মতো রসুন পরিমাণ, পরিমান মত লবণ, পরিমাণ মতো বেসন ও পরিমাণ মতো তেল।
প্রস্তুত প্রণালী
থানকুনি পাতা ধুয়ে কুচি করে কেটে নিতে হবে। তারপর থানকুনি পাতা কুচির ভিতরে পেঁয়াজ কুচি রসুন কুচি হলুদ লবণ ও বেসন একসাথে ভালোভাবে মাখিয়ে নিন। পাত্রের তেল গরম করতে দিন। তেল গরম হয়ে আসলে তেলে পিয়াজুর মতো করে মাখানো থানকুনি পাতা পেস্তা গরম তেলে ছেড়ে দিন এবং দুই পাশ উল্টা এ ভাজুন। ভাজা হয়ে গেলে প্লেটে তুলে নিন এবং গরম গরম পরিবেশ করুন।

থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

থানকুনি পাতার গুনাগুন অনেক বেশি। থানকুনি পাতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। গ্রামাঞ্চলের মানুষ থানকুনি পাতা বেশি ব্যবহার করত কিন্তু যতদিন যাচ্ছে আস্তে আস্তে এই থানকুনি পাতার ব্যবহার উপকারিতা সম্পর্কে মানুষ অজানা হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এই গাছ বাড়িতে লাগানো হতো ঔষধি হিসাবে। কিন্তু এখন প্রায় এই গাছটি আর কেউ চেনে না বললেই চলে। প্রাচীন যুগে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রেও থানকুনি পাতার সম্পর্কে বলা আছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় অন্যান্য দেশেও থানকুনি পাতার ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

থানকুনি পাতার উপকারিতা

  • ক্ষয় নিরাময়ে, খেলতে গেলে অনেক সময় আঘাত লাগে কেটে যায়।তখন থানকুনি পাতা বেটে সেই জায়গায় লাগিয়ে দিলে রক্তপাড়া বন্ধ হয় সংক্রামক আশঙ্কা থাকে না এমনকি ব্যথা কমে যায়।
  • রক্ত জমাট বেঁধে যায় না থানকুনি পাতার মধ্যে,এতে নানা রকম খনিজ উপাদান রয়েছে। শরীরের রক্ত জমাট বাঁধলে এর ফলে হার্ট কিডনি মস্তিষ্কে ক্ষতি হয় থানকুনি পাতার কারণে রক্ত জমাট বাঁধে না।
  • আলসার নিরাময়ে থানকুনি পাতা খুব ভালো কাজ করে। থানকুনি পাতা নিয়মিত খেলে হজম সমস্যা দূর হয়। আলসার সেরে যায়।
  • ঘুমের সমস্যা হলে থানকুনি পাতা ভেজানো পানি প্রতিদিন সকালে খেতে পারেন। ঘুমের সমস্যা দূর হয়।
  • থানকুনি পাতার রসের সঙ্গে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেলে বিভিন্ন রকম টক্সিন বের হয়ে যায়। এতে আপনার শরীর ফুরফুরে অসুস্থ থাকবে।
  • শরীর জ্বালাপোড়া কমাতে থানকুনি পাতা খুবই ভালো কাজ করে। শরীরে জ্বালাপোড়া যন্ত্রণা ক্লান্তি ভাব ইত্যাদি দেখা দিলে থানকুনি পাতার রস খেলে এই সমস্যা দূর হবে।

থানকুনি পাতার অপকারিতা

থানকুনি পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে যেমন, থানকুনি পাতার অনেক অপকারিতা রয়েছে।আসুন আমরা অপকারিতা জেনে নি।
  • থানকুনি পাতা রস মধুর সাথে কাঁচা খেলে বা কাঁচা দুধের সাথে কাঁচা খেলে কোন ক্ষতি করে না। তবে এই রস মাত্রই অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি করে। কোন কিছুই অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয় তাতে শারীরিক অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • পেটের যন্ত্রণা শুরু হতে পারে যা অতি তীব্র মাত্রায় হতে পারে।
  • অ্যালার্জি হতে পারে।
  • রক্তচাপ কমে যে মাথা ঘোরা শুরু হতে পারের
  • হঠাৎ মাথা ঘোরারও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যাদের অপারেশন রয়েছে তারা দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি হয় তাদের থানকুনি পাতা খাওয়া উচিত নয়।
  • যাদের লিভারে কোন সমস্যা রয়েছে তারা থানকুনি পাতা এড়িয়ে চলুন।

পেটের সমস্যায় থানকুনি পাতা

থানকুনি পাতা পেটের সমস্যার জন্য অনেক উপকারী একটি ভেষজ উদ্ভিদ। পেটের অনেক রকম সমস্যায় থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এমনকি আলসারের মতো রোগ কেউ সারিয়ে তুলতে পারে।অনেক সময় পেট ফাঁপা বা ডায়রিয়া শুরু হলে থানকুনির পাতা রস খেলে অনেক উপকারে আসে। ডায়রিয়া ও পেট ফাঁপা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

চুলের জন্য থানকুনি পাতার উপকারিতা

চুল পড়া কমাতে ধানকুনি পাতা অনেক সহায়তা করে। চুল পড়া কমানোর জন্য অনেক রকম তেল আছে সেগুলোর মধ্যেও থানকুনি পাতা অনেক সময় ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে আন্টি ইনফ্লেমেটরি রয়েছে। যা রক্ত সঞ্চালন করতে বৃদ্ধি করে এবং চুলকে সুস্থ রাখে। থানকুনি নির্যাস জুস করে বানিয়ে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।এতে ত্বকের রোগ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।

থানকুনি পাতা খেলে ফর্সা হয়

থানকুনি পাতাতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ব্রণের উপদ্রা কমায়। বিভিন্ন কারণে মুখে ব্রণ হয়। ব্রণ হলে মুখে কালো কালো দাগ হয়ে যায় এতে থানকুনির নির্যাস অনেক উপকারে আসে।
  • বয়স হয়ে গেলে মুখের ত্বক কুঁচকে যায় আবার অনেকের কম বয়সেই ত্বক বুড়িয়ে যায়।অকালে ফুরিয়ে যাওয়া হাত থেকে রক্ষা পেতে থানকুনি পাতার রস অনেক উপকারে আসে। ত্বকের বলিরেখা দূর করে এবং ত্বককে নমনীয়তা বাড়তে সহায়তা করে।
  • ত্বক জ্বালাপোড়া ক্ষত দূর করতেও থানকুনি পাতা অনেক সাহায্য করে। ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ত্বকে ঠান্ডা রাখে এতে ত্বক সতেজ ভাবে থাকে।
  • ত্বকের আদ্রতা ও নমনীয়তা ধরে রাখতে থানকুনির নির্যাস এর অ্যামাইনো এসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড ও ফাইটো কেমিক্যাল পুষ্টি যোগায়। এতে ত্বক থাকে সতেজ বয়সের ছাপমুক্ত কোমল।ত্বকে উজ্জ্বল ফর্সা করতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য

বর্তমান যুগে আমরা শুধু ওষুধের উপর নির্ভরশীল। ওষুধের পাশাপাশি যদি আমরা কিছু ওষুধে গাছও ব্যবহার করে থাকি বিভিন্ন রোগ সারানোর জন্য তাহলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি। তাই আপনারা থানকুনি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে ব্যবহার করতে পারেন। কারণ থানকুনি পাতার অনেক উপকারিতা আছে।

আরো পড়ুন:ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন

আমার এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তবে অবশ্যই আপনারা আপনাদের বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন। এবং নিয়মিত আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;

comment url