ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চান? ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া উপকার সম্পর্কে জানতে চাইলে আমার এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আপনারা জানতে পারবেন ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে। ডেঙ্গু জ্বর একটি মশা বাহিত রোগ। যা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এই রোগটি দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি শুধু নিজেই অসুস্থ হয় তাও না মশা বাহিত রোগের কারণে এই রোগ রোগীর শরীর থেকে আরেকজন সুস্থ ব্যক্তির গায়ে কামড় দিয়ে তাকেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত করতে পারে।
সে কারণে আমাদের সচেতন হতে হবে। যেন বাড়ির আশেপাশ বাড়ির ছাদ যেন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকে। বর্ষাকালে বেশি মশা দেখা যায়। তাই বর্ষার মৌসুমে যেন বৃষ্টির পানি কোথাও জমে না থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে তাহলে ডেঙ্গু মশা সৃষ্টি হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। আমাদের অবশ্যই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে এবং গ্রাম অঞ্চলেও মানুষদের সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
ভূমিকা
ডেঙ্গু একটি ভয়াবহ রোগ। যে রোগে মানুষ মৃত্যুর কোলে ধীরে ধীরে ঢলে পড়ে। ডেঙ্গু হলে অনেক সময় অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো বোঝা যায়। আবার অনেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এ লক্ষণ গুলো নাও বোঝা যেতে পারে। তবে আমাদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান থাকা দরকার। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করতে হবে সেগুলো আমাদের জানতে হবে। তাই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে পড়ুন এবং নিজেই জানুন অন্যকে জানান।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা
ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরস ঘটিত রোগ। যা বিশ্বের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ, ল্যাট্রিন আমেরিকা ও আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু দেখা যায়। ভারতের প্রাক গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে ডেঙ্গু রোগের বৃদ্ধি বেশি হয়। ডেঙ্গু সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মার্চ মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত আবার জুন জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রমণের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছে। ডেঙ্গু হলে বেশিরভাগ রোগী ভুল চিকিৎসা, দেরিতে চিকিৎসা ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। যে রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে তার কোন বিশেষ লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। এতে মানুষ ভুল চিকিৎসায় মারা যায় বেশি। সঠিক চিকিৎসা বাড়ি থেকেও নেয়া যেতে পারে। শুধু একটু সচেতন থাকলে ডেঙ্গু সেরে যায়। রোগী যদি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে অবশ্যই হসপিটালে ভর্তির প্রয়োজন রয়েছে। ডেঙ্গু ছড়ানোর আগেই যদি আমরা সচেতন থাকি তবে এই রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে একটি ভাইরাসজনিত রোগ। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই এই রোগের কোন উপসর্গ দেখা নাও যেতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর এই প্রভাব দেখা দেয় তবে ডেঙ্গুর উপসর্গগুলো আমরা সঠিক নিয়মে জেনে বুঝে নিতে পারি যে এটি ডেঙ্গু জ্বর। আসুন আমরা সেই লক্ষণ গুলো জেনে নিই যেন সহজেই আমরা বুঝতে পারি যে ডেঙ্গু হয়েছে।
- তীব্র মাথাব্যথা
- বমি বমি ভাব
- মাথা ঘোরা
- ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি দেখা দিয়া
- মাংসপেশীতে যন্ত্রণা করা বা ব্যথা করা
- চোখের ভিতরে ব্যথা করা
- অতিরিক্ত শরীরে তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি হয়
- গ্রন্থি ক্রোমনয়ে ফুলে যাওয়া
- গলার শুকিয়ে যায় পানির পিপাসা বেশি লাগে
- শরীরে লালচে রাশ দেখা দেয়
- ডায়রিয়া সহ খাবারের অরুচি ভাব হতে পারে
- অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ হতে পারে
এই উপসর্গগুলো রোগ সংক্রমণের সময় ৪-১০ দিনের মধ্যেই দেখা দেয়। দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে এবং দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তা ভয়ানক আকার ধারণ করে। সেই কারণে প্রথমবার যখন ডেঙ্গুতে আক্রমণ করে তখন সে রোগীকে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।
ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার
ডেঙ্গু একটি মশা যা রোগ সৃষ্টি করার কারণ সে রোগটি হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু জ্বর মশা বাহিত ও ভাইরাস জনিত রোগ। মশা থেকে রক্ষা পেলে এই জ্বর থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- ডেঙ্গু মশা যেন আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে না কামড় দেয় সে ব্যবস্থা করতে হবে।
- মশা যেন না কামড়ায় সেই জন্য শরীরে ঢাকা জামা কাপড় জুতা পরিধান করুন।
- রাতে শোবার সময় অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে চারিপাশ ভালো করে গুঁজে শুতে হবে। যেন মশারিতে মশা না ঢুকে।
- মশা বংশবিস্তার না করতে পারে সেজন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল জাতীয় ওষধ পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। মশা নিরোধক কেমিক্যাল যেমন পারমেথ্রিন ব্যবহার করতে হবে।
- বাড়ির আশেপাশে যেন জঙ্গল না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ মশারা বংশবিস্তার করে পানি জমলে। জঙ্গল যদি বেশি থাকে তবে সেখানে পানি জমার সম্ভাবনা থাকে এবং কোন খালি পাত্র থাকলে সেগুলোতে পানি জমতে পারে। আবার ফুলদানি টপ ডাবের খোসা ইত্যাদিতে পানি জমতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে যেন কোন জায়গায় পানি জমে না থাকে এতে মশার বংশ বিস্তার হয়।
ডেঙ্গু জ্বর হলে যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত না
ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটির বেশি প্যারাসিটামল খেতে পারবেনা। তবে যেসব রোগীর অসুস্থ তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন। যেসব রোগী লিভার, হার এবং কিডনি জাতীয় অসুখে ভুগছে তারা অবশ্যই ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। ডেঙ্গু জ্বর হলে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে আজ অ্যাসপিরিন জাতীয় কোন রকম ঔষধ খাওয়া যাবেনা।
তাতে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তাই উপরোক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনারা ওষুধ খাবেন এবং দ্রুত চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করবেন।ডেঙ্গু জ্বর হলে সাধারণত ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এরকম খাবার খেলে অনেক উপকারে আসে।ডেঙ্গু জ্বর হলে হাসপাতালে ভর্তির আগে দেখতে হবে ডেঙ্গু জ্বর টি খুব বেশি মারাত্মক কিনা।
আরো পড়ুন:খরা মোকাবেলায় করণীয় কি কি
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকারভেদ রয়েছে যেটি তিনভাবে হয়ে থাকে। একটা ভাগ হচ্ছে এ, বি ও সি। প্রথম সারিতে পড়ে এ।প্রথম সারির রোগীগুলো সাধারণত নরমাল এদের শুধু জ্বর থাকে। দ্বিতীয় সারিতে পড়ে বি। এ রোগীর লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় জ্বর বমি বমি ভাব পেটে ব্যথা। এরকম লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে অবশ্যই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। সি হচ্ছে দ্বিতীয় সারির রোগী। এ রোগের দুদিন জ্বরের পরে শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় তাই সে ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। বেশি খারাপ হলে অবশ্যই আইসিইউ এর পর্যবেক্ষণে নিয়া দরকার।
ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই জ্বর আসতে পারে। যে ব্যক্তিকে ডেঙ্গু মশা কামড়েছে সেই ব্যক্তির জ্বর আসা থেকে শুরু করে ৫-৬ দিন পর্যন্ত থাকে।যে ব্যক্তি একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় সে ব্যক্তির ৩-৪ বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। প্রথমবার যখন আক্রান্ত হয় সাধারণত জ্বর আসে এবং এটি স্বাভাবিক থাকে। দ্বিতীয় বার তৃতীয়বার চতুর্থবার এর জন্য খুব মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই আপনাদের উচিত ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ দেখা দিলেই হাসপাতালে দ্রুত নিয়ে যাওয়ার জন্য।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে খাবার
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য খাবার হিসেবে আইরন রাখতে পারেন যা শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে ডাবের পানি স্যালাইন ফলের শরবত অনেক উপকার করে।ডেঙ্গু প্রতিরোধে যে সব খাবার প্রয়োজন আসুন আমরা সেগুলো জেনেনি
- খাদ্য তালিকায় দুধ দই ও দুগ্ধ জাত খাবার রাখা দরকার। দয়ে থাকে ল্যাকটো ব্যাসিলাস নামক ব্যাকটেরিয়া যা অনেক উপকারী। এসব খাবার খেলে সোডিয়াম পটাশিয়াম ফসফরাস পরিমাণ ঠিক থাকে।
- প্রোটিন জাতীয় খাবার রোগ সারাতে সাহায্য করে। খাদ্য তালিকায় রাখুন ডাল, বাদাম, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি।
- বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পেঁপের পাতার রস খেলে অনেক উপকারে আসে। তাই পেঁপের পাতা একটু তেতো হলেও উপকারে দিক দিয়ে বিবেচনা করে আপনারা পেঁপের পাতা রসটাও খেতে পারেন এতে অনেক ভালো উপকার পাবেন।
- তরল জাতীয় খাবার হিসেবে ডাবের পানি, ফলের রস বিভিন্ন রকম শরবত যেগুলো কেমিক্যাল ছাড়া হয়ে থাকে, স্যালাইন ইত্যাদি খেতে পারেন।
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে অনেক উপকার আসে। আইরন সমৃদ্ধ খাবারের শরীরের দুর্বলতা কাটিয়ে শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে। মিষ্টি কুমড়া, ছোলা, কচু, পালং শাক, সামুদ্রিক মাছ, কলিজা ও ডালিম ইত্যাদি তে আয়রন প্রচুর পরিমাণ রয়েছে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে। মৌসুমী জাতীয় টক ফল কমলালেবু, বাতাবি লেবু, জলপাই, ইত্যাদিতে ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন:চুল পড়া বন্ধ করার ঔষধের নাম
উপরোক্ত খাবার খেয়ে আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে পারি এবং ডেঙ্গু হলে এই খাবারগুলো বেশি পরিমাণ খেয়ে আমরা সুস্থ থাকতে পারি। তাই আমাদের অবশ্যই খাবারের দিকে নজর রাখতে হবে।
ডেঙ্গু হলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না
ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে সব খাবার দেয়া যাবে না। অবশ্যই খাবারের দিকে নজর দিতে হবে যে ডেঙ্গু রোগী স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাচ্ছে কিনা। তাই আসুন আমরা জেনে নি ডেঙ্গু হলে কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবে না।
- ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার যেগুলো অত্যন্ত তৈলাক্ত সেই খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা।
- প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার কেমিক্যাল যুক্ত সেগুলো খাওয়া যাবে না।
- বিভিন্ন রকম আচার
- চিনিযুক্ত খাবার ও স্যাকারিন যুক্ত খাবার
- অতিরিক্ত তেল বা মশলাযুক্ত খাবার
- চর্বি বা ফ্যাট যুক্ত খাবার
- উচ্চ আসক্ত খাবার যেমন চা কফি, ক্যাফেইন যুক্ত পানীয়
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ভয়ের কিছু নাই। ঠিকমতো খাবার গ্রহণে ও বিশ্রামে ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারে। এবং সঠিকভাবে ডাক্তারের চিকিৎসা গ্রহণের কারণে ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হয়ে যাবে।
লেখকের শেষ কথা
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সঠিকভাবে জানা প্রতিটা মানুষের প্রয়োজন। কারণ জাতি সচেতন হলে আমাদের মৃত্যুর হার কমবে এবং ডেঙ্গু থেকে সবাই রক্ষা পেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কেও ভালোভাবে জানা দরকার। ডেঙ্গু একটি ভাইরাস যে ভাইরাস মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে নিয়ে যেতে পারে। যা একবারের বেশি দ্বিতীয়বার এমনভাবে চারবার পর্যন্ত হয়ে থাকে ।আমাদের অবশ্যই ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন।
আরো পড়ুন:হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ কি কি
আশা করি আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং আপনারা উপকৃত হয়েছেন। আমার এই পোস্টটি আপনাদের কাছে ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করে তাদের উপকারিত করুন। নতুন নতুন আর্টিকেল পড়ার জন্য আমার এই ওয়েবসাইটের নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;
comment url