ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন এবং ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন। আমার এই পোস্টে আপনাদেরকে ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জানানোর জন্য লিখেছি। যেন আপনারা পড়ে ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কেও জানতে পারেন এবং ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জেনে সে অনুযায়ী চাষ করে ব্যবসা উন্নতি করতে পারেন।
ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন

যারা ব্যবসা করতে চাই না শুধু ড্রাগন ফল চাষ করে নিজেরাই খাওয়ার উপযোগী করে রাখতে পারেন বা শখের বসে ড্রাগন ফল চাষ করতে পারেন তারাও আমার এই পোস্টটি পড়তে পারেন। আপনারা সম্পর্কে বিস্তারিত এই পোস্টে জানতে পারবেন।

ভূমিকা

ড্রাগন ফল চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন কিভাবে চাষ করলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন ফল খেলে অনেক উপকার আসে যা আমাদের হার্টের সমস্যা ক্যান্সার ডায়াবেটিস দূর করতে সহায়তা করে। ড্রাগন ফল একটি বিদেশি ফল। এখন বাংলাদেশেও ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। যখন ড্রাগন ফল প্রথমদিকে পাওয়া যায়তো তখন এটার দাম অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এখন সেই ড্রাগন ফলেরই দাম অনেক কমে এসেছে। ড্রাগন ফল রোপন করার এক বছর পর থেকে ফল ধরতে শুরু করে। আপনাদেরকে জানাবো ড্রাগন ফলের কিভাবে চাষ পদ্ধতি করলে আশানুরও ফল পাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন:তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি

  • ড্রাগন ফল হচ্ছে আমেরিকার একটি প্রসিদ্ধ ফল। এই ফলটি আমাদের দেশেও এখন অনেক জনপ্রিয়। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও ফ্লোরিডা থেকে ২০০৭ সালে এই ফলের জাত চারা বাংলাদেশের নিয়ে আসা হয়। এই ফলের গাছটা দেখতে অনেকটা ক্যাকটাস গাছের মতো। এই গাছের কোন পাতা হয়না গাছটা সাধারণত১.৫-২.৬ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। 
  • ফলের আকারটা বড় খোসাটা শক্ত নরম রং লাল আসতো রসালো প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলের বিজ দেখতে অনেকটা কালো ছোট নরম।
  • ড্রাগন ফলের প্রজাতি তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা
  • লাল ড্রাগন ফল। এই ফলটা দেখতে শাঁস সাদা ও খোসা লাল।
  • কোস্টারিকা ড্রাগন ফল। শাঁস লাল রংয়ের এবং খোসাও লাল রঙের হয়ে থাকে।
  • হলুদ রংয়ের ড্রাগন ফল। শাঁস সাদা রঙের ও খোসা ।

জমি নির্বাচন ও তৈরি

পানি নিষ্কাশিত উচু জমি বা মাঝারি উঁচু অথবা পাহাড়ি টাইপের জমি নির্বাচন করতে হবে এবং২-৩ টি মই দিয়ে চাষ করে নিতে হবে।

রোপন পদ্ধতি ও রোপন সময়

ফলরোপণের সঠিক সময় হচ্ছে এপ্রিল ও অক্টোবর মাস। সমতলভূমি বর্গাকার বা ষঢ়ভূজাকার এবং যে ভূমি পাহাড়ি সেভূমিতে কন্ঠের পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল রোপন করা যায়।

বংশবিস্তার

বীজের মাধ্যমে ড্রাগন ফলের বংশবিস্তার হয়ে থাকে ।এছাড়া মাতৃ গুণাগুণ বজায় রেখেও অঙ্গজ পদ্ধতিতে বংশবিস্তার করা যায়। অঙ্গজ পদ্ধতি অর্থাৎ কাটিং পদ্ধতিকে বলা হয়। সাধারণত শক্ত শাখা১-১.৫ ফুট কেটে ছায়াযুক্ত দোআঁশ মাটিতে গোড়ার দিকে কাটা অংশটা পুতে দিয়ে চারা উৎপাদন করা যায়।২০-৩০ দিন পর সেই কাটিং এর অংশ থেকে শিকড় বেরিয়ে আসে তখন এটা মাঠে লাগানো যায়। কাটিং কি তো কলম সরাসরি মাটিতে লাগিয়ে চাষ করা যায়।

গর্ত তৈরি ও চারা রোপণ

গর্ত করে খোলা রাখতে হবে যেন রোদ পাই।২০-২৫ দিন পর গর্তে ২৫-৩০ কেজি পচা গোবর,২৫০ গ্রাম টিএসপি,১৫০ গ্রাম জিপসাম ও ২৫০ গ্রাম এমওপি এবং৫০ গ্রাম জিংক সালফেট সার দিতে হবে। তারপর গর্তটা ভরাট করে দিতে হবে।১০-১৫ দিন পর ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে চারটি করে চারা লাগাতে হবে। এক বছর পর্যন্ত গর্তে তিন মাস পর পর ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে।

আরো পড়ুন:বিশ্বের সেরা ১০ সুপার ফুডের তালিকা

পরিচর্যা

প্রয়োজন হলে চারপাশে বেড়া দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। আগাছা অপসারণ করতে হবে। সেচের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে নিয়মিত সেচ দেয়া যায়। গাছ যেন বড় হয়ে লতা পড়ে না যায় সেজন্য সাপোর্টের জন্য ৪ টি চারার মাঝে একটি করে সিমেন্টের খুঁটি পুততে হবে। বর্ষার সময় যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে নতুবা গাছের গোড়া পচে যাবে। গাছের লতাগোলা যেন নিয়ে নিচে না পড়ে যায় সেজন্য কোন লাঠি বা টায়ার দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখতে হবে যেন মাটিতে ঝুলে না পড়ে যায়।

ড্রাগন ফলের গাছে সার প্রয়োগ

গাছের বয়স

গোবর সার

ইউরিয়া (গ্রাম)

টিএসপি (গ্রাম)

এমওপি (গ্রাম)

১-৩ বছর

৪০-৬৫

৫০০-৮০০

৪০০-৫০০

৫০০-৬০০

৩-৬ বছর

৬৫-৮০

৮০০-১২০০

৫০০-৭০০

৬০০-৮০০

৬-৯ বছর

৮০-১০০

১২০০-২০০০

৭০০-১০০০

৮০০-১০০০

১০ বছরের বেশি

১০০-১২৫

২০০০-৩০০০

১০০০-১৫০০

১০০০-১৫০০

গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমাণও যথাযথভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন গাছের বয়স জেনে প্রয়োজন মত সার প্রয়োগ করতে হবে। সারের পরিমাণ সহ সারের নাম নিচে দেয়া হলো

রোগ ও বালার ব্যবস্থা

এই গাছের খুব একটা রোগ বালাই দেখা যায় না তবে গোড়া পচা কান্ড ও মূলপচা রোগ এগুলা দেখা দেয়।
  • কাণ্ড গোড়া পঁচা ও কান্ড পঁচা এ রোগটি সাধারণত ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়। এ রোগ হলে গাছের কান্ড প্রথমে হলুদ এবং পরে কালো হয়ে যায় তারপরে সেটা থেকে পচন শুরু হয়। এজন্য ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে দিলে দমন করা যায়।
  • মূল পচা অতিরিক্ত পানি জমে মূলের পচন ধরে। Fusarium spদ্বারা এ রোগটি হয়ে থাকে। এই রোগ হলে মাটির ভিতরে গড়া পোস্টে পোস্টে পচঁতে পঁচতে গাছটি টান দিলে উপরের দিকে উঠে আসে। এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উঁচু জমিতে এ ফল চাষ করা উচিত এবং পানি জমলে তা নিষ্কাশন করতে হবে।

পোকামাকড়

অন্যান্য ফলের তুলনায় ড্রাগন ফলে পোকামাকড় খুবই কম লাগে। তবে মিলিবাগের ও এফিড আক্রমণ দেখা যায়।এফিড গাছের কচি শাখা ও পাতা চুষে খায় ফলে আক্রান্ত গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পোকাটা গাছের পাতায় আঠালো সাদা রং এর রসের মত মল ত্যাগ করে ফলে একরকম ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়। এতে গাছের খাদ্য তৈরি কমে যায়। সুমিথিয়ন/ডেসিস বা ম্যালাথিয়ন কীটনাশক প্রতি১০ লিটার পানিতে২৫ মিলিলিটার ভালোভাবে মিশে স্প্রে করলেই সহজে এর রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ড্রাগন ফল সংগ্রহ ও ফলন

ডাবল ড্রাগন ফল লাগানোর পরে থেকে১-১.৫ বছর বয়সের মধ্যে ফল সংগ্রহ করতে হয়। ফলটা যখন লাল রঙের হয়ে থাকে তখন সেটা সংগ্রহ করা হয়।একটি পূর্ণবয়স্ক গাছে ২০-১০০ টি ফল পাওয়া যায় যা অনেকগুলোই হয় এ ফলের দাম ভালো পাওয়া যায়। ফল কয়েকটি পর্যায়ে সংগ্রহ করা যায়। জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এবং নভেম্বর মাস থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ফল সংগ্রহ করা যায়।

ড্রাগন গাছে ফুল আসার সময়

ড্রাগন ফলে ফুল আসে এপ্রিল থেকে মে মাসের দিকে।আবার অনেক সময় দেখা যায় জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসেও ড্রাগন ফলের ফুল আসে এ সময়টাই বেশি উপযুক্ত ফুল আসার কারন এটি বর্ষাকাল বর্ষার সময় ফল আসার উপযুক্ত সময়।

ড্রাগন ফলের গুরুত্ব

  • হার শক্ত মজবুত ও দাঁত শক্ত রাখে।
  • ভিটামিন বি ৩ রক্তের কোলেস্ট্রল কমায়।
  • এর ফলে মিষ্টির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিসের জন্য অনেক ভালো।
  • চুল ও ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • শরীরের যাবতীয় বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।
  • হজম শক্তিতে সহায়তা করে।
  • শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সহায়তা করে।

ড্রাগন ফলের উপকারিতা

ড্রাগন ফল একটি বিদেশি ফল হলেও এটি দেশে পাওয়া যায়। এ ফলের অনেক গুণাগুণ রয়েছে আসুন আমরা সে গুনাগুন গুলো জেনে নি।
  • যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা ড্রাগন ফল খেলে হাটকে সুস্থ রাখতে পারে।
  • চুল পড়া রোধে ড্রাগন ফল অনেক উপকারী।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবেও ড্রাগন ফল বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ড্রাগন ফল অনেক উপকারী একটি ফল।
  • কিডনি সুস্থ রাখতে ড্রাগন ফল সাহায্য করে।
  • অন্যান্য ফলের মত ড্রাগন ফল খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস বৃদ্ধি পায় না। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • ড্রাগন ফল মুখের ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে।
  • ড্রাগন ফল হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
  • হার শক্ত করতে ড্রাগন ফল সহায়তা করে।

লেখকের মন্তব্য

ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত জানুন, জেনে আপনারা সেই ভাবে যদি চাষ করেন তবে ভাল উপকারিতা পাবেন। এতে অনেক ফল পাওয়া যাবে। ড্রাগন ফল চাষ পদ্ধতি অনুযায়ী চাষ করলে এই ফল যেভাবে ব্যাপক হারে ফলন দেয় তাতে ভালো টাকা আয় করা যায়। ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক যা আমরা খেয়ে নিজেরা সুস্থ থাকতে পারি।

আরো পড়ুন:দিনে কয়টা খেজুর খাওয়া উচিত

পরিশেষে বলা যায় যে ড্রাগন ফলের ব্যবসা করলে আপনারা অনেক উপকার পাবেন আর্থিকভাবে। ব্যবসা ভালোভাবে দাঁড় করাতে পারবেন। ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ভালোভাবে জানতে হবে। পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লাগে এবং উপকৃত হন তবে আপনাদের বন্ধু বান্ধব আত্মীয়-স্বজন এবং অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;

comment url