মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাতের নাম
মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাতের নাম সম্পর্কে আমার এই পোস্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে আপনাদের এ বিষয়ে জানানোর জন্য। যেন আপনারা মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাত সম্পর্কে জানতে পারেন এবং উন্নত জাতের গরু চেনার উপায় সম্পর্কেও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আপনারা যারা গরু লালন পালন করতে চান তারা যেন এই পোস্টটি পড়ে এবং যারা গরু লালন পালন করেন না তারাও যেন পোস্টটি পড়ে উপকৃত হন।
সেগুলো অন্যদের মাধ্যমে বলতে পারে সে বিষয়ে আমি এই পোস্টটি লিখেছি। শুধু গরু কিনলেই হবে না মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাতের নাম জেনে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে বুঝে কিনা দরকার। এবং যদি আপনারা চান দুগ্ধ জাতের গরু সে সম্পর্কেও আমার এই পোস্টটি লেখা আছে। সেগুলো পড়ে বুঝে যেন কিনতে পারেন।
ভূমিকা
গরু চিনে না এমন কেউ নাই। গরু বিভিন্ন জাতের হতে পারে। এবং বিভিন্ন দেশেরও হতে পারে। শুধু যে বাংলাদেশেরই হয় তা নাই বিভিন্ন দেশ থেকে বীজ এনে কৃত্রিম উপায়ে গরু উৎপাদন করা সম্ভব। মন উৎপাদনকারী গরুর জাতের নাম জেনে গরুর লালন পালন করা যায়। বিভিন্ন রকম জাতের গরু আছে সেগুলোর নাম বিভিন্ন রকম।
কয়েকটি উন্নত জাতের গরুর নাম
উন্নত জাতের কয়েক রকমের গরু আছে তার মধ্যে আমি আপনাদেরকে পাঁচ রকম উন্নত জাতের গরুর নাম এবং সেগুলো সম্পর্কে জানাবো।
শাহীওয়াল গরু
এই গরুটি পাকিস্তানি এই গরুটি দেখতে বেশ লম্বা মোটাসোটা আকারের দেহ হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা লাল রঙের আবার হালকা লাল রং বা সাদা ও কালো। দেখতে অনেক সুন্দর শান্ত স্বভাবের। অনেক লম্বা দেহ বলে যে খুব দৌড়াদৌড়ি লাফালাফি ছোটাছুটি করে তা নয় অনেকটাই শান্ত। গাভী ও ষাঁড়ের হিসাব করলে ওজনের ভিন্নতা রয়েছে ।গাভীর ওজন এর চেয়ে ষাঁড়ের ওজন বেশি হয়। গাভীর ওজন হয় ৪৫০-৫৫০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন হয় ৭০০-১০০০ কেজি।
ব্রাহমা গরু
এই গরুটি বাংলাদেশের গরু নয় তবে এটা কৃত্রিমভাবে প্রজনন করে এই গরুটা জন্ম উৎপাদন শুরু হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগে উপপরিচালক ডক্টর ভবতোষ কান্তি সরকার বলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই গরুর বীজ এনে সরকার কয়েকটি জেলায় খামাটিদের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে গরুর উৎপাদন চাষ করা শুরু করে। এটি ২০০৮ সালে ‘বিফ ক্যাটল ডেভেলপমেন্ট‘ কর্মসূচি। ব্রাহমা গরু মূলত মাংস জাত হিসেবেই পরিচিত কারণ এগুলো বেশি দুধ দেয় না। আর এগুলোর মাংসের স্বাদ দেশি গরুর মত আকারেও দেখতে দেশি গরুর মত। এগুলোর চর্বি কম থাকে পুষ্টিতে ভরা তাই এগুলোর মাংস খাওয়া ভালো। সাধারণত এদের ষাঁড়ের ওজন হয়৮০০ -১০০০ কেজি হতে পারে আর গাভীর ওজন হয়৫০০-১০০০ কেজি।
জার্সি গরু
এগুলোর উৎপত্তিস্থান হচ্ছে ইংল্যান্ডে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রায় সর্বত্র পাওয়া যায়। জার্সি গরুগুলো আকারে অপেক্ষাকৃতভাবে ছোট দেহর গঠন সুন্দর নিখুঁত বেশ বড় সুগঠন শিরদাঁড়া সোজা মাথা ও ঘাড় সামঞ্জস্যপূর্ণ। গায়ের রং লাল কালো হয়ে থাকে। এগুলোর বাচ্চা হলে একটু দুর্বল প্রকৃতিরই হয় আকারে ছোট তাই শক্তিশালী হতেও এদের সময় লাগে। বাচ্চা লালন পালন করাও কষ্টকর। গাভীর ওজন হয় ৪০০-৫০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন হয়৬০০-৯০০ কেজি। এগুলো অনেক দূর দেয় দূত উৎপাদনের ক্ষেত্রে এগুলো সবচেয়ে বিখ্যাত। উৎপাদনের ক্ষমতা রাখে ৩৫০০-৪০০০ লিটার। যা দুধ উৎপাদনকারী খামারির জন্য অনেক লাভজনক।
হারিয়ানা
হারিয়ানা নামটি শুনেই বোঝা যায় যে হ্যাঁ এটি ভারত থেকেই উৎপত্তি।তবে ভারতের বিভিন্ন স্থানে এটি উৎপত্তি হয়। ভারতের হারিয়ানা দিল্লি কর্ণাল্য স্থানে দেখা যায়। এদের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অঞ্চলেও দেখা যায়। এগুলো অপেক্ষা কি তোর সরু আকারের চিকন ও মুসলিম মত হয় এগুলোর বাচ্চা জন্মের ওজন ২২-২৫ কেজি। এগুলো দেখতে অনেক সুন্দর ধূসর রং এর পরিশ্রমী ও শক্তিশালী হয়। এই জাতের গরু গুলো গাড়ি টানতেও উপযোগী। বছরের দুধ উৎপাদন হয়২০০০ কেজি। গাভীর ওজন ৪০০-৫০০ কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন ৬০০-১০০০ কেজি।
অমৃত মহল
এগুলোর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে ভারত। ভারতের বিভিন্ন অন্যান্য উপদেশে এগুলোর খামার দেখা যায়। এগুলো দেখতে অনেক বড়সড়ো লম্বা চট রয়েছে এদের রং ধূসর রং এর হয়ে থাকে। এদের মাথা পা ও চট কালো রুমে আবৃত্তে ভরা থাকে দেখতেও সুন্দর লাগে তবে এরা বেশি দুধ উৎপাদন করতে পারেনা ।এরা অনেক শক্তিশালী কাজে সক্ষম।
দেশি গরুর জাত
দেশি গরুর দেখতে এখন অনেকটা বিদেশি গরু দেশি গরুর মতই পাওয়া যায়। তাই অনেকেই গরু কিনতে যেয়ে প্রতারিত হচ্ছে বিদেশি গরুকে দেশি বলে কিনে নিচ্ছে।মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাতের নাম সম্পর্কে জেনেও আপনারা চিনতে পারেন। দেশী গরুর মাংসের স্বাদ অন্যরকম। বিদেশি গরুর মাংসের স্বাদের চাইতে দেশি গরুর মাংসের স্বাদ অনেক ভালো। আমাদের বাংলাদেশ পাঁচ ধরনের দেশে গরু পাওয়া যায়। সেগুলো চিনে ভালো করে দেখে বুঝে আপনাদের কিনতে হবে। আসুন আমরা জেনে নি দেশগুলোর নাম ও চেনার উপায়।
স্থানীয় দেশে জাতের গরু
- দেশের সবখানে গরু দেখতে পাওয়া যায় বলেই জানা যায় কারণ এগুলোর আকার ছোট কুচ সুগঠিত গলার নিচে চামড়া বেশ সুন্দর।
- বেশি ভাজ থাকে না তবে প্রাপ্তবয়স্ক যেই গরুগুলো রয়েছে তার গলার নিচের চামড়া ঝুলে থাকে।
- এদের শিং বাঁকানো থাকে।
- গায়ের রং লাল সাদা ধূসর ও রঙ্গের মিশ্রিত থাকে।
- এদের উচ্চতা ৩ থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে এর চেয়ে বেশি হয় না।
- ষাঁড়ের ওজন হয়২০০-২৫০ এবং গাভীর ওজন ১৫০-২০০ কেজি।
রেট চিটাগাং ক্যাটল
- এই জাতের গরুগুলা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাওয়া যায়।
- এই জাতের গরু গুলো মূলত রং লাগচে হয়ে থাকে। চোখের পাতা খুর মুখ লেজের পাশে একই রকম রং লাল।
- এগুলোর দেহ ছোট হয়।
- ষাড়ের ওজন ২৫০-৪০০ এবং গাভীর ওজন ১৫০-২৫০ কেজি হয়ে থাকে।
- উচ্চতা সাড়ে তিন ফুটের মতো হয় এবং লম্বা তিন থেকে চার ফুটের কাছাকাছি হয়ে থাকে ।
পাবনা ক্যাটল
- এ জাতের গরু গুলো পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় বেশি দেখা যায়।
- এই গরুগুলো সাদা বা সাদা মেশানো রঙের হয়ে থাকে মিশ্রণ বর্ণের হয়ে থাকে।
- এদের দেহ পাঁচ ফুটের মত আর উচ্চতা চার ফুটের মতো হয়ে থাকে।
- ষাঁড়ের ওজন হয় ৩৫০-৪০০ কেজি এবং গাভীর ওজন হয় ২৫০-২৮০ কেজি।
- যে কোন আবহায় এই গরু পালন করা যায় এবং এগুলোর পালনে খাবার কম লাগে খরচ কম হয়।
নর্থ বেঙ্গল গ্রে
- অঞ্চলের জেলাগুলোতে এ জাতের গরু দেখা যায় বেশি।
- এই গরু গুলো দেখতে অনেকটা সাদা বা গাড়ো ধূসর ও সাদা রংয়ের মাঝামাঝি হয়ে থাকে।
- গরুর উচ্চতা 3 ফুট এর বেশি এবং দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় তিন ফুটের কাছাকাছি হয়।
- ষাঁড়ের ওজন ৩০০-৩৫০ এবং গাভীর ওজন২০০-২৫০ কেজি হয়ে থাকে।
- এদের শিং আকারে ছোট বা মাঝারি এবং ভেতরের দিকে কিছুটা বাঁকানো হয়ে থাকে।
মুন্সিগঞ্জ ক্যাটল
- এ জাতের গরু গুলো মুন্সিগঞ্জ এলাকায় এবং মিরকাদিম উপজেলায় পাওয়া যায়।
- গরুর গায়ের রং মূলত সাদা হয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন স্থানে হালকা রঙের হয়ে থাকে।
- ষাঁড় গরুর ওজন হয় ২৫০-৩৫০ কেজি এবং গাভীর ওজন হয় ২০০-২৮০ কেজি।
মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাতের নাম
মাংস উৎপাদনকারী গরুর জাতের নাম এর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো আমরা জেনে নি
- মাংস উৎপাদন গরুর শরীর দেখতে অনেকটা গোলাকার এবং দেখে বোঝা যায় যে সেটাই চর্বি কম থাকে।
- এদের মাংস খেতে সুস্বাদু।
- এদের শরীর থেকে প্রায় ৭০% মাংস পাওয়া যায়।
- এরা অতি তাড়াতাড়ি বাইরের ফিড জাতীয় খাবার খাইয়ে মোটা হয় না এরা স্বাভাবিকভাবেই মোটা হয় এবং স্বাভাবিক খাবার খেয়ে থাকে। খর ভুসি ঘাস ইত্যাদি।
- এরা স্বাভাবিকভাবেই পূর্ণতা লাভ করে।
- ব্রাহমানএই গরু আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপসাগরীয় অঞ্চলে উৎপত্তি হয়। এদের মাংস সুস্বাদু মাংস উৎপাদনের বেশি সক্ষম থাকে।
- ডেভল এদের উৎপত্তিস্থল হচ্ছে ডেভনসায়ার ও ইংল্যান্ড। প্রথমে এরা আমেরিকাতে ১৮১৭ সালে নিয়ে আসা হয় পরে সমগ্র দেশেই গরুর জাত ছড়িয়ে পড়ে।
- ডেক্সটার এদের আমেরিকা থেকে প্রথম নিয়ে আসা হয় আয়ারল্যান্ডে এবং এখন পর্যন্ত এদের উৎপত্তি হচ্ছে ওখানে।
উন্নত জাতের গরু চেনার উপায়
উন্নত জাতের গরু চিনতে গেলে আমাদের আগে ভাগ করতে হবে যে কোন বিষয়ের জন্য আপনারা গরুটি নিবেন। চার ধরনের গরু রয়েছে।
- দুধ উৎপাদনকারী যেমন জার্সি আয়ারশার, ফ্রিজিয়ান, হলেস্টাইন ইত্যাদি।
- ধারাবাহি গাড়ি টানার গরু যেমন হরিয়ানা, মালভী, জেবু, থারপারকার ইত্যাদি।
- মাংস উৎপাদনকারী গরু যেমন হেয়ারফোর্ড, রেট ,ব্রাহ্মমা ইত্যাদি।
- মাংস ও দুধ উৎপাদন কারি গরু যেমন আইরিশমোলড, সাউথ ডেভন, গেলভি ইত্যাদি।
দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে গরু উৎপাদনে। অনেকেই সঠিকভাবে গরু চিনতে না পারায় অনেক ক্ষতির মুখে পড়ছে। আপনি যদি দুধ উৎপাদনের জন্য গরু পোষান তাহলে অবশ্যই দেখতে হবে গাড়িটি লাভদায়ক কিনা। উন্নত জাতের গাভীর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলো দেখে গাভী কিনতে হবে। যে গাভি অবশ্যই ভালোমতো দুধ দিবে লক্ষ্য রাখতে হবে গাভিটি সেভাবেই দেখে নিতে হবে।
সুষম খাবার উন্নত বাস স্ট্যান্ড সঠিক পরিচালনা সঠিকভাবে লালন পালন করা এগুলোতে এগুলোতেই শুধু দুধ উৎপাদন হবে বেশি তা নয়। সঠিক গাভী নির্বাচন করতে হবে। উন্নত জাতের গাভীর দেহের আকার বড় হবে পেট থাকবে ঢিলা ঢিলা মাথা ছোট চামড়া থাকবে পাতলা নরমও আলগা। সামনের পেছনের পা দুটির মধ্যে বেশ কিছু অংশ থাকা থাকবে তার সামনে পায়ের চেয়ে বড় হবে। প্রশস্ত চওড়া হবে ওলান বড় হবে। এগুলা দেখে বোঝা যাবে যে এ গরুটি দুগ্ধ জাতের জন্য সঠিক রয়েছে।
লেখক এর শেষ কথা
বাংলাদেশে বিভিন্ন বাড়িতেই গরু পালন করা হয়। কেউ খামার করে পালন করে আবার কেউ বাড়িতে একটা দুইটা পালন করে। গরু গৃহপালিত পশু। তাই খুব সহজেই পোষ মানে। কিছু গরু আছে মাংস উৎপাদন গরু হিসেবে বিভিন্ন রকম জাতের হয়।
প্রিয় পাঠক আমার এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাদের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব এবং অন্যান্যদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।এবং আমার এই ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন ধন্যবাদ।
সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;
comment url