গ্রীষ্মকালের উপকারিতা ও অপকারিতা
গ্রীষ্মকালের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আমার এই পোস্টটি আপনারা পড়ুন। আমি এই পোস্টে আপনাদেরকে গ্রীষ্মকালের উপকারিতা অপকারিতা এবং গ্রীষ্মকালীন কি কি ফল রয়েছে এবং কি কি সবজি রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানাবো। গ্রীষ্মকালের যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে সে সম্পর্কেও আপনারা জানতে পারবেন।
গ্রীষ্মকালে খুব গরম পরে গরমের মানুষ অস্থির হয়ে যায়। অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার গ্রীষ্মকালে নানা রকম ফল পাই। তাই গ্রীষ্মকালের উপকারিতা ও অপকারিতা মেনেই আমাদের চলা দরকার। যেন কেউ অসুস্থ না হয়ে পড়ে।
ভূমিকা
বাংলায় ছয়টি ঋতু রয়েছে এর মধ্যে একটি ঋতু হচ্ছে গ্রীষ্মকাল।গ্রীষ্মকালের উপকারিতা ও অপকারিতাও রয়েছে। গ্রীষ্মকালে প্রচুর গরম পড়ে। নদী-নালা খাল বিল সব শুকিয়ে যায়। আর এই গ্রীষ্মকালটি দুইটা বাস মিলে হয় বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ। বৈশাখ মাসে ঝড় হয় যেটা কে কালবৈশাখী ঝড়ো ও বলা হয়। তেমন এই মাসে অনেক রকম ফলো পাওয়া যায়। অনেক রকম সবজিও পাওয়া যায়। তবে শীতের মত এত সবজি পাওয়া যায় না। কিন্তু এই মাসে যে ফলগুলো পাওয়া যায় তার পুষ্টিগুণ অনেক এবং সাধু অনেক। ফলগুলো দিয়েও বিভিন্ন রকম জুস বানানো যায়।
গ্রীষ্মকালের বৈশিষ্ট্য
বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এই ছয় ঋতুর মধ্যে গ্রীষ্মকাল একটি ঋতু। যা বাংলায় বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়ে গ্রীষ্মকাল হয়। এবং ইংরেজি মাসের এপ্রিল থেকে জুন মাসকে ধরা হয় গ্রীষ্মকাল হিসেবে। গ্রীষ্মকালে প্রচন্ড গরম থাকে তাপমাত্রার উত্তপ্ত এত বেশি হয় যে অনেক নদী প্রায় শুকিয়ে যায় এমন কি মাটিতে ফাটল ধরে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি হতেই থাকে।
সূর্য যেন পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে আছে যার কারণে তাপমাত্রাটা অতি রিক্ত বৃদ্ধি পেতেই থাকে। রাতেও তাপমাত্রা কমে না তাপমাত্রা যেন বাড়তেই আছে।অনেক এলাকায় উচ্চমাত্রায় বাষ্পীয়ভবনের কারণে দেশটিতে খরা ও দাবানলের সৃষ্টি হয়। এ সময় সূর্যালোক এবং শক্তিশালী UV রশ্মি বেশি পাই।গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন রকম রসালো ফলের সমাহার ছড়ায়।
আরো পড়ুন:বারোমাসি আমের জাত সমূহ জানুন
বিভিন্ন রকম ফল এ সময় পাকতে থাকে তাই গরম দরকার অতি গরমে এ ফলগুলো পাকে ।গ্রীষ্মকাল হচ্ছে বিভিন্ন ফলের সমাহারের ঋতু এ সময় বিভিন্ন রকম ফল পাওয়া যায়। এমন কোন বাড়ি নাই যে তারা ফল রাখেনা। এসময় শুধু ফল নয় ফুলেরও সমাহার মেলে।
অনেক রকম বাহারি ফুল এসময় পাওয়া যায় যা নজর করা ও মন জুড়ানো। লাল হলুদ বিভিন্ন রঙের প্রাকৃতিক কে যেন সৌন্দর্যে আরো বাড়িয়ে তোলে।ইপিল ই পিল,অর্জুন,কনক চূড়া, কামিনী ,গাব, পারুল,সোনালু, বরুণ, বেরিয়া ইত্যাদি ফুল পাওয়া যায়। শুধু যে ফুলে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তা নয় কিছু ফুলের ওষুধই গুণও রয়েছে।তাই বুঝতেই পারছেন আপনারা যে গ্রীষ্মকাল কেন আমাদের প্রয়োজন। ফুল ও বিভিন্ন রকম ফলের জন্য এ গ্রীষ্মকালও আমাদের প্রয়োজন।
গ্রীষ্ম কালে কি কি ফল হয়
বৈশাখ মাস শুরু হতে না হতেই বাজারে আমের সমাহার শুরু হয়ে যায়। কাঁচা পাকা বিভিন্ন রকমের আম।গ্রীষ্মকালের ফল হচ্ছে কাঁঠাল জাম লিচু তাল বেল তরমুজ ইত্যাদি।
আম
কাঁচা আম সবাই পছন্দ করে আমসত্ত্ব ,আচার এবং চাটনি করে খাওয়া যায়। তাই কাঁচা ও পাকা দুই রকম আম কিনতে থাকে। আমের মধ্যে বিভিন্ন রকম আম রয়েছে ল্যাংড়া ,হিমসাগর, ফজলি, হাড়িভাঙ্গা ,গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত , লক্ষনা, আম্রপলি ইত্যাদি। কাঁচা আমের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে। এছাড়াও আন্টিঅক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধক ও স্তন লিউকেমিয়া কোলন সহ প্রোস্টেট ক্যান্সারেও প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করে।কাঁচা পাকা দুই ধরনের আমে অনেক ভিটামিন রয়েছে। টারটারিক ম্যালিক এসিড ও সাইট্রিক এসিড রয়েছে। আম হজমে সাহায্য করে এবং অনিদ্রা দূর করে। আপনারা এই গরমে শুধু আমের আচার কেন আমের জুস করেও খেতে পারেন। কাঁচা আমের জুস খেতে অনেক ভালো লাগে।
কাঁঠাল
এটি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। একটা কাঁঠাল অনেকজন মিলে খেতে পারে আবার কাঁচা কাঁঠাল রান্না করেও খাওয়া যায় ।তার সাথে কাঁঠালের বিচিও খাওয়া যায়। কাঁঠাল কাঁচাতে রান্না করে খাওয়া যায়। কাছাকাছি তরকারি হিসেবে খুব মজাদার একটি খাবার।কাঁঠালে অনেক রকম ভিটামিন রয়েছে তার মধ্যে ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিং, সোডিয়াম, থায়ামিন, রিবোফাভিন আরো অনেক ভিটামিন রয়েছে। শর্করা ,ভিটামিন ও আমিষ রয়েছে যা শরীরের অনেক উপকারে আসে। কাঁঠাল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে রাতকানা রোগ নিয়ন্ত্রণ করে।
লিচু
গ্রীষ্মকালীন ফল হিসাবে লিচুকে সবাই খেতে অনেক ভালোবাসা। রসে ভরপুর এই লিচুটি বাইরে আবরণে আবৃত। লিছুর বাইরের খোসার রংটা লাল এবং খোসা ছিড়ে ভেতরে সাদা রংয়ের মাংস থাকে সেটি অনেক মিষ্টি খেতে হয়। বাইরের খোসার অংশ দেখলেই খেতে ইচ্ছা হয়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন খনিজ লবণ ও শ্বেতসার। লিচু কে রান্না করে খাওয়া যায় না। কিছু পাকলেই খেতে হয় বিভিন্ন রকমের লিচু আছে। বোম্বাই লিচু যে লিচুটা রসে ভরপুর একটু বড় ধরনের খেতে মিষ্টি।
জাম
জাম গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। জাম বেশি বড় হয় না আকারে ছোট হয়। তবে ছোট গুলাকে খুদি জাম বলা হয়। জাম খেতেও অনেকেই পছন্দ করেন। জাম রান্না করে খাওয়া হয় না। জাম পাকলে খেতে হয়। তবে জামে রয়েছে অনেক ভিটামিন। ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ফল। জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই ভালো একটি উপকারী ফল। আবার জামের বিচিটিকে গুড়া করে পাউডার করে রেখে সেটি পানিতে গুলে খেলে ডায়াবেটিস রোগীরা অনেক উপকার পাবে। জানতে চাটনি করেও খাওয়া হয়।
বেল
গ্রীষ্মকালীন এটি আরেকটি ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ শর্করা প্রোটিন ভিটামিন ও খনিজ লবণ। বেল কাঁচা অবস্থাতেও খাওয়া যায় চাটনি করে। এবং কাঁচা বেলের ভর্তাও খাওয়া যায়। বেল পাকলে সেটা শরবত হিসেবে খাওয়া যায়। আপনাদের যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা আছে তারা বেলের শরবত খেলে অনেক উপকার পাবেন।পেটের অসুখে বেল অনেক উপকারী।
তরমুজ
গ্রীষ্মের একটি ফল।তরমুজ রান্না করে খাওয়া যায় না। এটি পাকলে খাওয়া হয়। রসালো এর ফলটি শরবত করেও খাওয়া যায়। তরমুজে রয়েছে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি। যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এবং তাপ দেহ কমাতেও তরমুজ অনেক ভালো কাজ করে। গরমের ক্লান্তি দূর করে ও তৃষ্ণা মিটাই।
গ্রীষ্মকালের উপকারিতা ও অপকারিতা
গ্রীষ্মকালের উপকারিতা বলতে গেলে পুষ্টিকর ফল সমাহারে ভরপুর এক ঋতু। গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন রকম ফল পাওয়া যায় যার বিভিন্ন রকম পুষ্টিগুণ রয়েছে। আরে পুষ্টিগুণ মানব দেহের শরীরকে রোগ মুক্ত থাকতে সহায়তা করে। গ্রীষ্মকালীন ফলে যে ভিটামিন গুলো রয়েছে তা জেনে নেয়া যাক
- কাঁঠাল এই ফলে রয়েছে শর্করা ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি যা রুচি ও শক্তি বর্ধন করতে সাহায্য করে।
- লিচু পানির তৃষ্ণা মিটাতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে শর্করা ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি।
- তরমুজ ভিটামিন এ বি ও সি সমৃদ্ধ। তাছাড়াও লাইকোপিল ও সিট্রলিন রয়েছে। সর্দি টনসিল ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- জাম এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে যা রক্তস্বল্পতা দূর করে এবং ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
- তাল ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও আঁশ রয়েছে। যা হজমে সাহায্য করে অন্রের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- বেল এটি আমশয় ও ডায়রিয়াতে একটু ভালো উপকারে আসে। বেল ত্বকের নানারকম সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।
গ্রীষ্মকালের বিভিন্ন রকম ফল পাওয়া যায় আরে ফল অতিরিক্ত গরমের জন্যই পাকতে সাহায্য করে। তাই আমাদের গরম প্রয়োজন।গ্রীষ্মকালের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক সেগুলো খেয়াল রাখতে হবে আমাদের উপকারী ফলগুলা খেতে হবে এবং এবং অপকারী জন্য যেন অতিরিক্ত ফল না খাওয়া হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
গ্রীষ্মকালের অপকারিতা
গ্রীষ্মকালে ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা অনেক রয়েছে সেগুলো মেনেই আপনাদের ফল খাওয়া উচিত। অপকারিতা গুলো জেনে নেয়া যাক
- ডায়াবেটিস রোগী অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় ফল না খাওয়াই ভালো সেক্ষেত্রে ভাগ কমিয়ে দিতে হবে। আম খুব মিষ্টি সেগুলো পরিমাণ মতো খাবেন।
- কিডনি রোগী ফলের পুষ্টি গুণ হিসাব করে খাবেন তরমুজকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো যেহেতু তরমুজে অনেক পানি রয়েছে।
- কাঁঠাল খেলে অনেকের হজম শক্তিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে তাই কাঁঠাল খাওয়ার পরে একটা কাঁঠালের বিচি খেয়ে নিতে পারেন।
- যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তারা লিচু কম খাবেন কারণ জাতীয় ফল।
- অনেক সময় অতিরিক্ত তাল খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।
- তাই যেটাই খাবেন আপনারা বুঝে খাবেন যে ফল বেশি খেলে সমস্যা যেন না হয় তাই পরিমাণ মতোই খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
গ্রীষ্মকালীন ফসল কি কি
গ্রীষ্মকালীন অনেক রকম ফসল আছে। গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন রকম সবজি আছে যা বিভিন্ন রকম স্বাদের। সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, ঢেঁড়স ,মিষ্টি কুমড়া, করলা, পটল, পুঁইশাক, লাল শাক, ডাঁটা শাক ,শসা ইত্যাদি।এসব সবজিতে রয়েছে ভিটামিন, আয়রন, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যেও সবরকম ভিটামিন পাওয়া যায়। তবে শীতকালের চাইতে গ্রীষ্মকালীন সবজি ও ফসল কম হয়।
লেখকেরমন্তব্য
গ্রীষ্মকালে অনেক উপকারী ফল রয়েছে। গ্রীষ্মকালে যেমন গরম তেমন ফলেরও বিভিন্ন রকম স্বাদ। যে ফলগুলো খাওয়ার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করা হয় স্বাদের গুনে ভরপুর। গ্রীষ্মকালের উপকারী ও অপকারীতা সম্পর্কে ও গ্রীষ্মকালের বৈশিষ্ট্য গ্রীষ্মকালে কি কি ফল হয় এসব বিষয়ে এই আর্টিকেলে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরেছি।
আরো পড়ুন:দেশি ফলের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি
আমার এই পোস্টটি পড়ে আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনারা এই পোস্টটি আপনাদের বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে শেয়ার করুন। এবং আমার এই ওয়েবসাইটটি প্রতিনিয়ত ভিজিট করতে পারেন আর নতুন নতুন তথ্যের জন্য ধন্যবাদ।
সাদ বি ডি নীতিমালা; মেনেকমেন্টকরুনপ্রতিটিকমেন্টরিভিউকরাহয়;
comment url